প্রায় এক দশক পর গত ৮ জানুয়ারি
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের
সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে সমঝোতার
মাধ্যমে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন করা হয়। এরপর গত সাত মাসেও আর
পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের
সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রভাবশালী
নেতাদের কেন্দ্র করে এখানকার আওয়ামী
লীগের রাজনীতিতে দুটি বলয় তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে একটি বলয় গড়ে উঠেছে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে কেন্দ্র
করে। তাঁর সঙ্গে আছেন জেলা কমিটির
সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা
চেয়ারম্যান এ এম গোলাম কিবরিয়া। অপর
বলয়ের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হলেন সিরাজগঞ্জ-২
(সদর-কামারখন্দ) আসনের সাংসদ হাবিবে
মিল্লাত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়। তাঁর
সঙ্গে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। সাবেক
মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস এখন জেলা পরিষদের
প্রশাসক।
দুই পক্ষই জেলার রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা ও সংগঠনকে কবজায় রাখতে
সচেষ্ট রয়েছে। দুই পক্ষই চায় নিজ নিজ
বলয়ের নেতাদের কমিটিতে ঢোকাতে। এ
নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে পূর্ণাঙ্গ
কমিটি করার কাজ আটকে আছে বলে
অভিযোগ আছে।
যদিও লতিফ বিশ্বাস দাবি করেন, স্থানীয়
নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে ধারণা নিতে একটু
সময় লাগছে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে
দেরি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের
সঙ্গে আলোচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। তিনি দাবি করেন,
জেলা আওয়ামী লীগে নেতাদের মধ্যে
কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে প্রতিযোগিতার
প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। নেতা-কর্মীদের
কারও মধ্যে যদি দ্বন্দ্ব থেকেও থাকে, তার
কোনো বহিঃপ্রকাশ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের
কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, মোহাম্মদ
নাসিম ও হাবিবে মিল্লাতের মধ্যে
প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকলেও দলে
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুজনের মধ্যে ঠান্ডা
লড়াই চলছে। এ কারণে নেতা-কর্মীরাও দুটি
ধারায় বিভক্তি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়ভাবে প্রচার আছে যে পরবর্তী
নির্বাচন সামনে রেখে মোহাম্মদ নাসিম
তাঁর বড় ছেলেকে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-
সদর আংশিক) আসনে এবং নিজেকে
সিরাজগঞ্জ-২ (সদর) আসনে প্রতিষ্ঠিত করার
জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সাংসদ
হাবিবে মিল্লাত প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়
হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করা কষ্টসাধ্য হয়ে
পড়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে
মোহাম্মদ নাসিম প্রার্থী হতে না পারায়
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তাঁর ছেলে তানভীর
শাকিল ওরফে জয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। এ আসন থেকে
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলের
মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন মোহাম্মদ
নাসিম।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য
যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোর সঙ্গে
কথা বলতে চাননি মোহাম্মদ নাসিম। তাঁর
ঘনিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক এ এম গোলাম কিবরিয়া দাবি
করেন, জেলার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে
রাজনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ে কোনো দ্বন্দ্ব
নেই। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা বিতর্ক
রয়েছে।
হাবিবে মিল্লাতও দাবি করেন, তাঁদের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল বা বিভেদ
নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে
পারে। এটা থাকা স্বাভাবিক। তিনি
অভিযোগ করেন, এলাকার রাজনীতিতে
দীর্ঘদিন ধরে গঠনতান্ত্রিকভাবে অযাচিত
হস্তক্ষেপ প্রথা চালু রয়েছে। এ প্রক্রিয়া দল
ও এলাকার জন্য ক্ষতিকর।
0 comments:
Post a Comment