অনলাইন ডেস্ক:
সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস টেনের সময়সূচি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রনালয়। একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে রেলপথ মন্ত্রনালয় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি’র আসন সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ঈশ্বরদি-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা চলাচলের অপ্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে সরাসরি সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত চলাচলের সিদ্ধান্তও ঘোষনা করেছে।
মঙ্গলবার জারিকৃত রেলপথ মন্ত্রনালয়ের প্রঙ্গাপন অনুযায়ি আগামী ১৩’ই ডিসেম্বর থেকে ভোর ছয়টা’য় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন ত্যাগ কওে জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সকাল ১০ টায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছবে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। আবার বিকেল পাচটায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করে রাত ০৯’টা ১৫ মিনিটে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে পৌছবে নতুন ভারতীয় বিজি কোচের ১০৫৬ আসনের এই ট্রেনটি।
রেলপথ মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) রফিকুল ইসলাম প্রেরিত রেলপথ মন্ত্রনালয়ের ৫৪.০১.২৬০০.০০৮.১৮.০১৪.১৫ নং স্মারকের প্রঙ্গাপনে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ন রেলওয়ে স্টেশন। ফেরী চলাচলের মাধ্যমে রেলওয়ে যোগাযোগ চালু থাকা কালে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন ছিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রবেশদ্বার। বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ২৩ জুন ১৯৯৮ তারিখে ট্রেন চলাচল আরম্ভ হলে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন হয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়।
জেলা শহর সিরাজগঞ্জের সাথে রাজধানী ঢাকার রেলওয়ে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও সিরাজগঞ্জে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক আলহাজ্ব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ২৭ জুন ২০১৩ সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়। এর মাধ্যমে আবারও রেলপথে সংযুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ।
কিন্তু ঢাকা অথবা সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে বিজি ওয়াশপিট না থাকায় ঈশ্বরদীতে পিট এটেনশনের জন্য ঢাকা-সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন এর পরিবর্তে ঢাকা-জামতৈল-সিরাজগঞ্জ বাজার-জামতৈল-ঈশ্বরদী রুটে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চলাচল করতে থাকে।
রেলপথ মন্ত্রনালয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ি সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ০৭’টা ৪৫ মিনিটে ঈশ্বরদী স্টেশন ত্যাগ করে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে পৌছে বেলা ০৯’টা ৫০ মিনিটে। বেলা ১০’টা ৪০ মিনিটে এই স্টেশন ত্যাগ করে দুপুর ০৩’টা ১০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছে। বিকেল ০৫’টায় ঐ স্টেশন ত্যাগ করে রাত ০৯’টা ২৫ মিনিটে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে যাত্রি নামিয়ে ঈশ্বরদী পৌঁছে রাত ১২’টায়।
ঢাকা-জামতৈল-সিরাজগঞ্জ বাজার-জামতৈল-ঈশ্বরদী রুটে চলাচল করায় ঈশ্বরদী থেকে জামতৈল পর্যন্ত যাত্রীদের চলাচলে অতিরিক্ত প্রায় দুই ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। ফলে ঈশ্বরদী-জামতৈল সেকশনের যাত্রীগণ এই ট্রেনে ভ্রমণে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে।
অক্টোবর ২০১৬ মাসে ঈশ্বরদী-জামতৈল সেকশনে ৭৭৫ নম্বর ট্রেনে ১০২৭০ কোটার বিপরীতে মাত্র ১৪৩৬টি টিকেট (অকুপেন্সি ১৪%) ও ৭৭৬ নম্বর ট্রেনে ৭৮২৬ কোটার বিপরীতে ২২২টি টিকেট (অকুপেন্সি ৩%) বিক্রয় হয়। যাত্রী চাহিদা না থাকা সত্তেও কেবল পিট এটেনশনের জন্য সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ঈশ্বরদী পর্যন্ত পরিচালনা করতে হয়।
কিন্তু সম্প্রতি বিজি ওয়াশপিট নির্মিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য বিজি ট্রেনের পিট এটেনশন এখন থেকে ঢাকায় করা হবে। এজন্য সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদী পর্যন্ত পরিচালনার আর কোন প্রয়োজন নাই।
এ অবস্থায় সিরাজগঞ্জবাসির আন্দোলন ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত), সদর-কামারখন্দ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি’র ক্রমাগত প্রচেষ্টা ও যোগাযোগের ফল হিসেবে প্রথমে চলতি বছরের ২০’ই জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভারতীয় বিজি কোচ দিয়ে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন টু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চলাচলের অনুমোদন প্রদান করেন।
এরপর রেলপথ মন্ত্রনালয়ের প্রঙ্গাপন অনুযায়ি আগামী ১৩’ই ডিসেম্বর থেকে ভোর ছয়টা’য় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন ত্যাগ কওে জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সকাল ১০ টায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছবে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। আবার বিকেল পাচটায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করে রাত ০৯’টা ১৫ মিনিটে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে পৌছবে নতুন ভারতীয় বিজি কোচের ১০৫৬ আসনের এই ট্রেনটি।
সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে ইঞ্জিন ঘুরানো ও কোচে পানি সরবরাহ ব্যাবস্থা নির্মিত হলে ট্রেনটি ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটে চলাচলের জন্য ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখ থেকে প্রস্তুত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একই সাথে নতুন ভারতীয় কোচ দিয়ে সাজানো সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগামী ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে রেলপথ মন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হকের ‘ফ্লাগ অফ” এর মাধ্যমে উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারন করে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রনালয়ের প্রঙ্গাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত), সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি জানান, দীর্ঘদিন পর সিরাজগঞ্জবাসির আরেকটি স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে নতুন ও আধুনিক ভারতীয় কোচ সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন সরাসরি সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে জামতৈল হয়ে ঢাকা যাতায়াত করার মাধ্যমে।
সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সময় নিয়ে কিছুটা যাত্রি ভোগান্তি’র কথা স্বীকার করে ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি আরো বলেন, আশা করছি এখন যে সময় নির্ধারিত হয়েছে তাতে আর যাত্রিদের কোন সমস্যা হবে না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে দু-দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আলোচ্যসূচির এক নম্বরে রয়েছে সিরাজগঞ্জ থেকে সয়দাবাদ ও সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মান চুক্তির বিষয়টি।
এদিকে এ বিষটি জানার পর সিরাজগঞ্জ স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক গাজী ডাঃ জহুরুল হক রাজা সিরাজগঞ্জবাসির দাবি বাস্বায়নে আন্তরিকতা ও নিরলসভাবে পরিশ্রম করার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের নতুন কোচ সংযোজন, আসন বৃদ্ধি ও সময়সূচি পরিবর্তনের জন্য আলহাজ্ব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি’র প্রতি কৃতঙ্গতা পোষন করে তাকে অভিনন্দন জানান।
0 comments:
Post a Comment