Thursday, October 1, 2015

সিরাজগঞ্জে ৫০ হাজার তাঁত বন্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার

তৃতীয় দফা বন্যায় নদী তীরবর্তী তাঁত সমৃদ্ধ ৪টি উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তসহ নানাবিধ সমস্যা সিরাজগঞ্জে বন্ধ হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার তাঁত শিল্প। বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁত শিল্পে নিয়োজিত অধিকাংশ লোকপল্লী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রচলিত ব্যবস্থা এখনও অসংগঠিত। গড়ে উঠেনি তাঁতবস্ত্র বিক্রয় বিপণনের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠোমো। ক্রমাগত সুতার মূল্য বৃদ্ধি, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি এবং তাদের উৎপাদিত বস্ত্র সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে তাঁতীরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। তারা ক্রমান্বয়ে হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। ফলে আর্থিক মেরুদ- ভেঙ্গে পড়েছে। এ কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৫০ হাজার তাঁত শিল্প। তবে এ হিসাব সরকারি। বাস্তবে এর পরিমাণ আরো বেশি। অনেকে তাদের পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন অনেক এলাকারই তাঁতী এখন অন্য পেশায় চলে গেছেন। জেলার সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, কাজিপুর, তাড়াশ, শাহজাদপুর, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জে মোট তাঁতী পরিবারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬শ’ ২৫ জন। তাঁতীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩শ’ ৯৫ জন। বর্তমানে ৯৪ হাজার তাঁত চালু থাকলেও প্রায় ৫০ হাজারের মতো তাঁত বন্ধ রয়েছে। নানা সমস্যার কারণে এর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি-এনায়েতপুরে গ্যাস লাইন সংযোগ সরবরাহ না থাকায় তাঁত শিল্প সমৃদ্ধির জন্য তাঁত বস্ত্র ক্যালেন্ডারিং মিল, মাচব্রাইজিং মিল, কটন মিল জাতীয় শিল্প কারখানা স্থাপনের মত যথেষ্ট সম্ভাবনা ও উদ্যোগী ব্যক্তি থাকার সত্ত্বেও এসব শিল্প কলকারখানা এ এলাকায় প্রতিষ্ঠা লাভে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় তাঁত ব্যবসায়ীরা বলেন, গত নির্বাচনের আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বেলকুচি-এনায়েতপুরে গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ৪ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে কলকারখান গড়ে উঠেনি। তাঁত শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করছে। তারা বলেন, শিল্প কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতি জরুরিভিত্তিতে বেলকুচি-এনায়েতপুরে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গ্যাস সম্প্রসারণ হলে এ এলাকায় গড়ে উঠবে তাঁতের সাথে সম্পর্কিত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সেই সাথে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। হস্ত চালিত তাঁতে বছরে প্রায় ৭০ কোটি মিটার বস্ত উৎপাদিত হয় যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ মিটিয়ে থাকে। এ শিল্প থেকে মূল্য সংযোজন করের পরিমাণ প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা। ২০০৩ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৫ লক্ষাধিক তাঁত রয়েছে এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলাতে রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের অধিক। সিরাজগঞ্জ দেশের অন্যতম তাঁত অধ্যুষিত এলাকা। এ জেলা তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত। সিরাজগঞ্জ জেলার সাথে তাঁতের নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। জেলায় তাঁতী পরিবারের সংখ্যা মোট ১৪ হাজার ৮শ’ ৭০ জন এবং তাঁত সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজারের অধিক। প্রতি বছর এ জেলায় হস্ত চালিত তাঁত থেকে প্রায় ২৩ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়া এ শিল্প সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করলেও ক্রমাগত সুতার মূল্যবৃদ্ধি, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি এবং তাদের উৎপাদিত বস্ত্র সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে তাঁতীরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এ কারনে বন্ধ হয়ে পড়ছে তাঁত কারখানা। জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার সত্ত্বেও এ শিল্পের সমস্যা অনেক। তাঁতীদের সুষ্ঠু সংগঠনের অভাব, মূলধনের অভাব, ন্যায্যমূল্যে মানসম্পন্ন উৎপাদন উপকরণ সহজলভ্য না হওয়া, প্রযুক্তিগত অনগ্রসরতা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাব, উৎপাদিত বস্ত্রের সুষ্ঠু বিপণনের অভাব তাঁত শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আছে। তাঁতীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সিরাজগঞ্জে তাঁত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি এলাকার তাঁত মালিক ও ব্যবসায়ীদের। বেলকুচি উপজেলার তাঁত মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, তাঁতীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পিট তাঁতকে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা নেয়া। তাহলে তাঁত শিল্পকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

0 comments:

Post a Comment