Wednesday, July 1, 2015

পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই (পাউবো) নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী করেছেন যমুনার ভাঙনকবলিত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বালিঘুগরী-শিমলার মানুষ।

সিরাজগঞ্জ: পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই
(পাউবো) নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির জন্য
দায়ী করেছেন যমুনার ভাঙনকবলিত সিরাজগঞ্জ
সদর উপজেলার বালিঘুগরী-শিমলার মানুষ।
তাদের অভিযোগ, পাউবোর দুর্নীতি ও
গাফিলতির কারণেই যমুনা পাড়ের মানুষ স্বর্বস্ব
হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো
সময়মতো বিকল্প বাঁধ নির্মাণ শুরু করতে না পারার কারণ হিসেবে এলাকাবাসীর অসহযোগিতাকে দায়ী করছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার
বালিঘুগরী, শিমলা, চরপাড়া, পাচ ঠাকুরী এলাকার ভাঙনকবলিত বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাউবো বছরের শুষ্ক মৌসুমে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে। আর বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় কাজের তোড়জোড়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হলেও ভাঙন থেকে রক্ষা
পাচ্ছে না হুমকিতে থাকা জনপদ।
ছোনগাছা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন, ৬ মাস
ধরে ড্রেজার মেশিন আনলেও কাজ শুরু
হয়নি। বর্ষা শুরু হওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি করে নদীর মাঝখানের একটি চর অপসারণ করা হচ্ছে।
শিমলা গ্রামের শুকুর আলী ও বাদশা আলম
বলেন, বালিঘুগরী নদী তীররক্ষা বাঁধটি শুষ্ক
মৌসুম থেকেই ভাঙতে শুরু করে। তখন
পদক্ষেপ না নিলেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতে
বিকল্প বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে। কিন্তু
ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলেই ভেসে
যাবে নতুন ওই বিকল্প বাঁধ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বার বার নদীভাঙনে
ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয় ছিল
ওয়াপদা বাঁধের দুই প্রান্ত। গত ১৩ জুন সেই
বাঁধেরও বেশকিছু অংশ নদীগর্ভে চলে
গেছে। এতে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে শিমলা,
চরপাড়া ও বালিঘুগরীর প্রায় ২ শতাধিক মানুষ
গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এরা অনেকেই
এখন বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যদিকে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে
পড়েছে শিমলা গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবার।
ওয়াপদায় আশ্রয় নেওয়া নুরজাহান বেগম ও
সুলতানা বেগম বলেন, অনেক সাংবাদিক লিখে
নিয়ে যায়, কিন্তু কিছুই হয় না। এগুলো লিখে
কোনো লাভ নাই।
শিমলা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক খাইরুল ইসলাম
বলেন, দফায় দফায় ভাঙনে তার ৬ বিঘা জমি
নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন মাথা গোঁজার
ঠাঁই নাই।
ড্রিগ্রীপাড়ার হাসান আলী, শিমলার সেলিম
রেজাসহ অনেকেরই অভিযোগ, ভাঙন শুরুর
সাথে সাথে ৩০০ মিটার পুরাতন বাঁধ সংরক্ষণ
প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে গত
১২ দিনে দুই দিকে বাঁশের বেড়া দেওয়া ছাড়া
আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সিরাজগঞ্জ
পাউবোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার উপ
সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক
বাংলানিউজকে বলেন, শুকনো মৌসুমে
এলাকাবাসীকে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে।
কিন্তু তারা তা শুনেনি। যখন তাদের বাড়িতে পানি
ঢুকেছে তখন তারা বাড়ি ছেড়েছে। জুনের
৩ তারিখে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জায়গা পেয়েছি।
এরপর কাজ শুরু হয়েছে।
বাঁধ সংরক্ষণ কাজে অর্থ লোপাটের
অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, নতুন
বাঁধ যাতে না ভেঙে না যায় সে জন্য পাইলিং করা
হয়েছে। এ কাজে বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারণ
করা হয়নি।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ
হাসান ইমাম বলেন, ২০১২/১৩ সালে নির্মিত
বাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন ২৩৫০ মিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিলেও এলাকাবাসীর অসহযোগিতার কারণে শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করা যায়নি।
তিনি জানান, ২০১২-১৩ সালের জমি অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়াতে নতুন বিকল্প বাঁধ তৈরিতে এলাকাবাসী বাঁধা দেয়। তারপরও স্থানীয় সাংসদ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জমি অধিগ্রহণ করে ৩ জুন থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
পাউবোর প্রচেষ্টায় বাঁধটা শক্তিশালী করতে
সক্ষম হয়েছি। আপাতাত ভাঙনের কোনো
আশঙ্কা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

0 comments:

Post a Comment