Saturday, June 13, 2015

সিরাজগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ২০০ মিটার ধস

গত দু’দিনের টানা বর্ষণে যমুনা
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর
উপজেলার বালিঘুগরী এলাকায় ২৫০ মিটার রিং বাঁধ সম্পূর্ণ নদীগর্ভে চলে গেছে।
অপরদিকে, সিমলা-কাজিপুর পাউবোর বন্যা
নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বালিঘুগরী এলাকায় ২০০
মিটার ধসে গেছে। এতে শতাধিক বাড়িঘর
বিলীন হয়েছে।
ভাঙনের মুখে শঙ্কায় রয়েছে ৫ গ্রামের
প্রায় সহস্রাধিক বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কয়েক হাজার একর আবাদি জমি।
এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড মূল বাঁধে বালির
বস্তা নিক্ষেপ করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১২ জুন) সকাল থেকে এ ভাঙন শুরু হয় এবং শনিবার (১৩ জুন) সকালে রিং বাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ভাঙন কবলিত
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত
দু’মাস ধরে পর্যায়ক্রমে ভাঙতে থাকে
বলিঘুগরি রিং বাঁধ। মঙ্গলবার (২ জুন) রাত থেকে
ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বুধবার (৩
জুন) ২৫০ মিটার রিং বাঁধের ১৬০ মিটার নদীগর্ভে
বিলীন হয়।
শুক্রবার থেকে টানা বর্ষণে বাঁধটি পুরোপুরি
নদীগর্ভে বিলীন হয়। এছাড়াও সিমলা-কাজিপুর
পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার
ধসে যায়। এতে অর্ধশত বাড়িঘর নদীগর্ভে
চলে গেছে।
ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে- বালিঘুগরী, সিমলা,
পাঁচ ঠাকুরী, চরপাড়া, ইটালি ও ভেওয়ামারা গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও হাজার হাজার একর আবাদি জমি।
ভাঙন কবলিত মানুষ নিরুপায় হয়ে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।
খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মূল বাঁধের
ধস ঠেকাতে ধসের স্থানে বালির বস্তা ডাম্পিং
করা শুরু করে। তবে, এতে ভাঙন রোধ
কোনো মতেই সম্ভব নয় বলে স্থানীয়রা
জানায়। সিমলা গ্রামের ব্যবসায়ী আফছার আলী খান বাংলানিউজকে জানান, যেকোনো মুহূর্তে
তাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হবে। তাই
বাড়িঘর সরিয়ে তারা ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয়
নিচ্ছেন।
একই গ্রামের শুকুর আলী বলেন, আমার বাড়িটি
নদীগর্ভে চলে গেলে দাঁড়ানোর আর
কোনো জায়গা থাকবে না।
চলবালী ঘুগরী গ্রামের আজাহার আলী
অভিযোগ করেন, প্রায় তিনমাস ধরে যমুনা
নদীর মাঝখানে ওঠা চ্যানেল অপসারণের
জন্য ড্রেজার নিয়ে আসা হলেও তা কাজ শুরু
করেনি। সপ্তাহখানেক আগে থেকে কাজ
শুরু করলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
আনোয়ারা বেগম ও মরিয়ম খাতুন কান্নাজড়িত
কণ্ঠে বলেন, যমুনা নদী তাদের সর্বশান্ত
করেছে। তাদের আর কোনো আশ্রয়
নেই। এদিকে, প্রায় এক মাস পূর্বে যমুনার ভাঙন
ঠেকাতে মূল বাঁধের পশ্চিমপাশ দিয়ে শুরু
হয়েছে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ। ধীর গতিতে
কাজের কারণে ওই বাঁধ নির্মাণ এখনও শেষ
হয়নি।
অনেকের আশঙ্কা মূল বাঁধ ভেঙে গেলে
যমুনার স্রোত বিকল্প বাঁধটিকে ভাসিয়ে নিয়ে
যাবে।
সিমলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে
জানান, পাশে গর্ত করে সেখান থেকে মাটি
নিয়ে নতুন বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে
আশপাশের বাড়িঘর বিলীনের আশঙ্কা আরও
বাড়ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম অভিযোগ
করেন, প্রতিবছরই দুর্যোগকালীন পাউবোর
লোকজনের তোড়জোড় বেড়ে যায়।
শুকনো মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধে কোনো
কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসীর
দুর্ভোগ লাঘব হয় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার পরিদপ্তরের
নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে
জানান, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ
বাঁধের সামনে নদীর মাঝখানের চর অপসারণ
করা হচ্ছে। ওই চরের মাটি নিয়ে গ্রামের
দিকে আসা নদীর চ্যানেলটি বন্ধ করা হচ্ছে।
আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন
হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী
হাসান ইমাম বাংলানিউজকে জানান, ভাঙন ঠেকাতে
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বালির বস্তা নিক্ষেপ করা
হচ্ছে। এছাড়া বিকল্প বাঁধের দিকে বেশি নজর
দেওয়া হচ্ছে।

0 comments:

Post a Comment