নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ছয়
বছরের বন্দিজীবনের অবসান হল
সোনিয়া আশরাফ টুসির। নিহত টুসির
পরিবারের দাবি বিয়ের পর থেকেই
মূলত বন্দীজীবন যাপন করতেন টুসি।
কিন্তু প্রেম থেকে পরিনয়ে পরিনত
হওয়া সংসার জীবনের গোপন কষ্টের
কথা কখনো নিজের পরিবারকে
জানায়নি নিহত টুসি।
নিহত সোনিয়া আশরাফ টুসির পরিবার
ও টুসি-উইলিয়ামস দম্পত্তির
ঘনিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা
যায়, সিরাজগঞ্জ শহরের আমলাপাড়া
মহল্লার ব্যাবসায়ি আশরাফুল
বারির অতি আদরের ছোট মেয়ে
সোনিয়া আশরাফ টুসি
শিক্ষাজীবনে অত্যান্ত মেধাবী ও
বিনয়ী ছিল। সিরাজগঞ্জ সরকারি
রাশিদুজ্জোহা মহিলা কলেজ থেকে
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
পরিক্ষায় উত্তিন হবার পর উচ্চ
শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়
সিরাজগঞ্জ সরকারী
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। এই
কলেজের ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হয়
টুসি। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক
অঙ্গনের সাথে জড়িত ছিল সে।
এখানে স্নাতক সন্মান ও মাষ্টার্স
অধ্যায়নকালেই সুন্দরী ও মেধাবী
ছাত্রী টুসির সাথে প্রেমের
সম্পর্কে আবদ্ধ হয় সিরাজগঞ্জ
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের
তৎকালিন অধ্যক্ষ গাজিউর রহমানের
ছেলে শামস এলাহি উইলিয়ামস।
সোনিয়া আশরাফ টুসি ও শামস এলাহি
উইলিয়ামস এর প্রেমের সম্পর্কটি
উভয় পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা
অবগত হলে ২০০৯ সালে
পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে
সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বিয়ের পর
থেকেই টুসিকে বিনা কারনে সন্দেহ
করত উইলিয়ামস। এই সন্দেহের কারনে
একপর্যায়ে টুসিকে বাড়িতে আটকে
রাখতে শুরু করে উইলিয়ামস। অফিস
যাবার পথে প্রতিনিয়ত বাড়ির বাইরে
থেকে টুসিকে ভিতরে রেখে তালা
ঝুলিয়ে রাখত উইলিয়ামস। পাশাপশি
তুচ্ছ কারনেই টুসির উপর চলত
শাররিক নির্যাতন। উইলিয়ামসের মা
লাইলী রহমান ও কুইন রহমানও এই
বিষয়টিকে উৎসাহ দিতে থাকে। কখনো
কখনো তারাও টুসির উপর চালাতে
থাকে মানসিক ও শাররিক নির্যাতন।
যার ফলে টুসি নির্যাতিত হয়ে
বন্দীজীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।
নিহতের স্বজন ও পাশ্ববর্তি
ফ্লাটে বসবাসকারিদের সাথে কথা
বলে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ আগে
ভূমিকম্পের সময় নিজ ফ্লাটেই
বন্দি ছিল টুসি। ভূমিকম্পে সবাই
যখন আতংকিত হয়ে ভবন ছেড়ে বাইরে
বের হয়ে আসছিল তখনো আতংকিত
টুসি বন্দি ছিল। এক পর্যায়ে
ভূমিকম্পের সময় তার চিৎকারে
পাশের ফ্লাটের সবাই তাকে রুম
থেকে বের করতে গিয়েও বাইরে তালা
ঝুলানো থাকায় ব্যার্থ হয়।
নিহত টুসির বাবা আশরাফুল বাড়ি
জানান, প্রেম করে বিয়ে করায়
উইলিয়ামসের শত নির্যাতনের কথা
টুসি চাপা দিয়ে রেখেছিল। কখনোই
আমাদের কিছু জানায়নি। এমনকি গত
ছয় বছরে টুসি কখনোই উইলিয়ামসকে
ছাড়া আমার বাড়িতে আসেনি বা
আসতে পারেনি। উইলিয়ামসও কখনো
ওকে একা একা বাড়িতে রেখে যায়নি।
বিয়ের পর থেকে কোনদিনই কোন
পারিবারিক বা সামাজিক
অনুষ্ঠানে টুসিকে একা একা যেতে
দেয়া হয়নি। অনেক সময় অত্যান্ত
ঘনিষ্ট স্বজনদের পারিবারিক
অনুষ্ঠানেও টুসির আসা হত না যদি
না উইলয়ামস আসত।
কান্নাজড়ানো কন্ঠে আশরাফুল
বাড়ি বলেন, কোন অপরাধ না করেও
আমার আদরের মেয়েটিকে নির্মম
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বন্দীজীবনের
অবসান করতে হল।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জ শহরের
আমলাপাড়া মহল্লার আশরাফুল
বারির মেয়ে সোনিয়া আশরাফ টুসির
সাথে প্রেমের পর বিয়ে হয়
সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গাজিউর
রহমানের ছেলে শামস এলাহি
উইলিয়ামসের। বিয়ের পর থেকে টুসি
ও উইলিয়ামস ঢাকার পূর্ব
তেজতুরিবাজারস্থ ট্রপিক্যাল
হোমসের একটি ফ্্যাটে ভাড়া থাকত।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই উইলিয়ামস
হঠ্যাৎই টুসির উপর মানসিক ও
শাররিক নির্যাতন শুরু করে। এতে
উইলিয়ামসের মা লাইলি রহমান ও বোন
কুইন রহমানও অংশ নেয়। এরা দুজনেও
প্রায়ই টুসির উপর শাররিক ও মানসিক
নির্যাতন করত। এরই একপর্যায়ে চলতি
বছরের ৫ই মে বিকালে ঢাকার পূর্ব
তেজতুরিবাজারস্থ ট্রপিক্যাল
হোমসের ফ্ল্যাটে সোনিয়া আশরাফ
টুসির ফাসিতে ঝুলানো লাশ পাওয়া
যায়। খবর পেয়ে টুসির পরিবারের
সদস্যরা ঢাকায় গেলে তাদের
জানানো হয় টুসি আত্বহত্যা
করেছে। কিন্তু নিহত সোনিয়া
আশরাফ টুসিকে হত্যা করা হয়েছে
বলে সিরাজগঞ্জ সরকারী
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক
অধ্যক্ষ গাজিউর রহমানের পূত্র
শামস এলাহি উইলিয়ামস, তার বোন
এটিএন বাংলার প্রযোজক ও
উপস্থাপক কুইন রহমান ও তার মা
লাইলী রহমানের বিরুদ্ধে তেজগাও
থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়
টুসির পরিবারের পক্ষ থেকে।
0 comments:
Post a Comment