কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বাংলার মানুষের
মনোজগতের কবি’ অভিধায় ভূষিত করেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলার
মানুষের মনোজগতের কবি। তিনি জমিদার হয়েও প্রজাদের দুঃখ দুর্দশায় এগিয়ে এসেছেন।”
শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী
উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের
উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন
প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, “রবীন্দ্রনাথই প্রথম এদেশে কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রচলন
করেন। একই সঙ্গে তার নোবেল পুরস্কারের
পুরো টাকাই সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ
হিসেবে বিতরণ করেছেন।
“শুধু কৃষকদের নয়, দীঘি ও পুকুর খনন করে
মৎস্য চাষের ব্যবস্থা করেছেন। নিজের
জমিদারির সাড়ে চার হাজার বিঘা সম্পত্তি গো-চারণ ভূমি হিসেবে মানুষকে দান করেছিলেন, যার উপর ভিত্তি করে এ অঞ্চলে দুগ্ধ খামার গড়ে ওঠে।” এখনও শাহজাদপুরে হাজার হাজার মানুষ এ খামার শিল্পের উপর নির্ভরশীল হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান নূর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ
নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম
বক্তব্য রাখেন। এছাড়া স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব বেগম আকতারী মমতাজ। এর আগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সার্কেল ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘ভিত্তিফলক’ উন্মোচন করেন।
এছাড়া ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস টারবাইন
বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিরাজগঞ্জের মুলীবাড়িতে
নির্মিত মেরিন একাডেমি, সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট
অফিস, সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার অফিস এবং সিরাজগঞ্জ শেখ রাসেল পৌর পার্কের
উদ্বোধন করেন। শাহজাদপুরের উপজেলা সদরে রবীন্দ্রনাথের একটি কাচারি বাড়ি রয়েছে, যেখানে মাঝে মাঝে এসে পৈতৃক জমিদারি দেখাশুনা করতেন তিনি। ২০১০ সালে এই উপজেলার পোতাদিয়া ইউনিয়নের রাউতারা এলাকায় ৫০ একর জমির উপর রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার ভিত্তিফলক উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রবীন্দ্রনাথ জমিদারহয়েও এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান
করে নিয়েছিলেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপনের মাধ্যমে তার এই ভালবাসা আরও
পাকাপোক্ত হলো।”
এই বিশ্ববিদ্যালয় হলে বাংলার মানুষের হৃদয়ে
রবীন্দ্রনাথ চিরকাল বেঁচে থাকবেন বলে
মন্তব্য করেন তিনি।
“বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন হলে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়;
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাহিত্য চর্চায় দেশবাসী
উপকৃত হবে।”
শাহজাদপুর ছাড়াও আগামীতে কুষ্টিয়ার শিলাইদহেও
একই রকম একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে
বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মধ্যবিত্ত বাঙালির মধ্যে রবীন্দ্রচর্চায় ভীত
হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানের সরকারি গণমাধ্যমে রবীন্দ্রনাথকে
নিষিদ্ধ করেছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “এমনকি ১৯৬১ সালে
রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালনেও
নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এ দেশের
শিল্পী, সাহিত্যিক ও সচেতন মানুষ আইয়ুব
সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে তা
সাড়ম্বরে পালন করেছে।”
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার বহু
আগেই বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গীতি কবিতাটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন।”
রবীন্দ্রনাথের অসাম্প্রদায়িক চেতনা,
আন্তর্জাতিকতাবাদ, মানবকল্যাণ এবং বিশ্বশান্তি
প্রতিষ্ঠার ভাবনাগুলো বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায়
স্থায়ী আসন করে নিয়েছিল বলে মন্তব্য
করেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারে করে শাহজাদপুরের
বাঘাবাড়ি হেলিপ্যাড এলাকায় এসে নামেন
প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে সড়ক পথে
শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হন।
অনুষ্ঠান শেষে দুপুর ১টার দিকে তিনি আবার
হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে শাহজাদপুর
ছাড়েন।
0 comments:
Post a Comment