Wednesday, May 13, 2015

সিরাজগঞ্জের দুই শতাধিক লোকের খোঁজ নেই

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে মানবপাচার ও পাচারকারীদের হাতে বন্দী হয়ে মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতিত হয়ে শ্রমিকদের মারা যাবার ঘটনা মিডিয়াতে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও অশুভ দালাল চক্র এখনো বেপরোয়া। লোভে পড়ে নিজেদের দালালদের হাতে শপে দেয়া সিরাজগঞ্জের দুই শতাধিক লোকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, থাই জঙ্গল থেকে এখনো মুক্তিপণের দাবিতে বন্দীদের দিয়ে দালালচক্র ফোন করাচ্ছে স্বজনদের কাছে।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানব পাচার নিয়ে এত শোরগোল সত্ত্বেও সিরাজগঞ্জের
দালালচক্র এখনো ‘শিকার’ ধরার চেষ্টা ছাড়েনি।
দালালদের খপ্পরে পড়ে জীবন বাজি রেখে যারা
কোনোরকমে থাইল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছেছেন
তাদের সেখানকার জঙ্গলে আটকে রেখে
নির্যাতন করে জনপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যারা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের
মৃত্যুকে বরণ করতে হচ্ছে। চৌহালীর ২ শতাধিক
মানুষের গত কয়েক মাস ধরে কোনো হদিস
পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রলারযোগে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠানোর লোভ দেখানো দালাল চক্রের অন্যতম ঘাঁটি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার রুপনাই, ব্রাহ্মণগ্রাম, চাঁদপুর, সোনাতলা, দ্বাদশপট্টি, ভাঙ্গাবাড়ি ও
গোপিনাথপুর গ্রাম। এসব গ্রামে রয়েছে
অর্ধশতাধিক দালাল। এরাই নানা কৌশল অবলম্বন করে উত্তরবঙ্গসহ টাঙ্গাইল এবং দেশের বিভিন্ন এলাকার সরলপ্রাণ মানুষকে পাচার করে আসছে। শ্রমিক, ভ্যান-রিকশাচালক, কৃষি শ্রমিক, স্বল্প শিক্ষিত উঠতি বয়সের লোকই তাদের প্রধান টার্গেট। প্রায় ৪ বছর ধরে এই চক্র প্রায় বিনা বাধায় মানবপাচার করে আসছে। মুক্তিপণের টাকায় তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে এই দালালদের
অন্যতম হলো, রুপনাই গাছপাড়া গ্রামের জেন্নত
আলী মোল্লা, তার ভাই বিশু মোল্লা, আব্দুল
মোন্নাফ, আব্দুল খালেক, তার ভাই পলাশ, নিজাম উদ্দিন, বিশু দালালের জামাতা শরিফ উদ্দিন, ব্রাহ্মণগ্রামের আজমত আলী, ফজল হক, শাবু বেপারী, আব্দুর রউফ, চাঁনপুরের আব্দুর রশিদ, ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের হোসেন, গোপিনাথপুরের আব্দুল হালিম, সোনাতলার ফরিদ, দ্বাদশপট্টি গ্রামের কালাম প্রমুখ। এর বাইরেও অনেক সহযোগী
দালাল রয়েছে। এরা ‘শিকার’দের ট্রলারে পৌঁছে
দেবার জন্য ২ থেকে পৌনে ৩ লাখ টাকা নিয়ে
থাকেন। এছাড়া আকাশ পথে মানবপাচার করেন খোকশাবাড়ি গ্রামের আলতাফ হোসেন শেখ, ব্রাহ্মণগ্রামের হাসান দালাল, মন্ডলপাড়ার সাইদুল মন্ডল, জহুরুল ইসলাম,
ইয়াকুব হোসেন। এরা একজনের কাছ থেকে ৩
থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর
মালয়েশিয়ায় নামা মাত্র তাদের বন্দী করে শুরু হয় মুক্তিপণ আদায়ের পালা।
পলাতক দালাল মোন্নাফ আলীর সাথে মোবাইল
ফোনে কথা বললে তিনি এখন আর ‘ব্যবসা’ করেন না বলে দাবি করেন। অন্যদিকে, এনায়েতপুরের কুখ্যাত দালাল আবুল কালামকে আটক করেছে পুলিশ। তার পাঠানো অনেক লোক নিখোঁজ। টেকনাফ (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, গত ৮ মে
মুক্তিপণ আদায় করার জন্য থাইল্যান্ডে জঙ্গল
থেকে কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়াপাড়ার
ফাতেমা খাতুনের কাছে ফোন দেয় দালালরা।
ফাতেমার ছেলে আলী হোসেন থাইল্যান্ডের
জঙ্গলে দালালদের হাতে বন্দী। মুক্তিপণ না
পেলে তার ছেলের দুটো কিডনি বিক্রি করে টাকা
উসুল করা হবে বলে তারা জানিয়ে দেয়। স্থানীয়
দালাল ফজল বর্দ্দার ছেলে জাহাঙ্গীর ভাল
বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে সমুদ্রপথে
মালয়েশিয়ায় পাচার করার পর থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দী রয়েছেন আলী হোসেন ও কালাইয়া
নামের আরেকজন।
গত ৮ মে দুপুরে ফাতেমার মোবাইলে ফোন
করে দালাল মোক্তার বলে, ‘ধর তোর ছেলের
সঙ্গে কথা বল।’ অপর প্রান্ত থেকে ‘মা আমাকে
বাচাঁও, মা আমাকে বাচাঁও বলে চিত্কার করতে থাকেন আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণের টাকার জন্য বিদ্যুতের তার দিয়ে তৈরি ‘বেত’ দিয়ে আমার পিঠে প্রতিদিন ১০০টি করে বাড়ি মেরে রক্তাক্ত করা হয়। তুমি তাদের টাকা দাও, না হলে আমার কিডনি বের করে বেঁচে ফেলবে। তারা আমার সামনে অনেককে মেরে ফেলেছে।’
http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2015/05/13/48622.html

0 comments:

Post a Comment