বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক নির্মাণে আগামীকাল
রোববার অথরিটির সঙ্গে সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল
অ্যান্ড মার্চেন্টিয়াল করপোরেশন
(এসআইএমসিএল) এবং ভারতীয় কোম্পানি
ইনফিনিটির যৌথ কনসোর্টিয়াম এসআইএমসিএল-
ইনফিনিটির চুক্তি স্বাক্ষরিত (কনসেশন
এগ্রিমেন্ট) হতে যাচ্ছে । রাজধানীর
হোটেল র্যাডিসন ব্লু-ওয়াটার গার্ডেনে এ
চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি
থাকবেন বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী
নসরুল হামিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ
পলক।
(প্রিয় টেক) অবশেষে উদ্যোগগ্রহণের ১৫
বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে হাইটেক
পার্ক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের
আওতাভুক্ত পার্কটি হবে গাজীপুরের
কালিয়াকৈরে। সেখানে হাইটেক পার্ককে
কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সফটওয়্যার ও
হার্ডঅয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, কলসেন্টার
এবং টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী
প্রতিষ্ঠানসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে তৈরি হবে
বিশ্বমানের পণ্য। দেশীয় সফটওয়্যার দিয়েই
চলবে ব্যাংক, বিমা, কলকারখানা, অফিস-আদালত।
চুক্তির মাধ্যমে হাইটেক পার্কের ২ এবং ৫ নং
ব্লকে ডেভেলপার নিয়োগ হবে বলে
জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের।
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের
সামিট গ্রুপ এবং ভারতের ইনফিনিটির যৌথ
কনসোর্টিয়াম সামিট টেকনোপলিস মূলত দু’টি
ব্লকে ভবন তৈরির কাজ করবে। আগামী ৪০ বছর
তাদের ব্যবস্থাপনায় এই দু’টি ব্লকে নির্বাচিত
প্রতিষ্ঠানগুলোকে জায়গা বরাদ্দ সংক্রান্ত কাজ
পরিচালিত হবে সামিট টেকনোপলিস’র অধীনে।
হাইটেক পার্কের আরও দু’টি ব্লকের কাজ
করবে মালয়েশিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের
সঙ্গেও শিগগিরই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
চুক্তি অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে কাজ
শুরুর কথা থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
জুনাইদ আহমেদ পলক চুক্তির পর পরই
এসআইএমসিএল-ইনফিনিটিকে নির্মাণকাজ শুরু
করতে বলেছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে
এই হাইটেক পার্কের ২ এবং ৫ নম্বর ব্লকের
অবকাঠামো উন্নয়ন করবে এ কনসোর্টিয়াম।
পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নের পর ৪০ বছর
এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে এসআইএসসিএল-ইনফিনিটি।
প্রতিষ্ঠানটি হাইটেক পার্কের অবকাঠামো
উন্নয়নে ১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ
করবে। সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে
যেতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
মতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন
মহাজোট সরকার। বর্তমান সরকার মতা থাকালীন
১৯৯৯ সালে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার
উদ্যোগ নেয়। মাঝখানে বিএনপি সরকার মতায়
থাকায় সে উদ্যোগের অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান
সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবার এতদিনে একটি
হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে।
এর আগে জুনাইদ আহমেদ পলক দেশের
সবচেয়ে বড় এই হাইটেক পার্ক নির্মাণে ১৪
বছর ধরে জমে থাকা নানা জটিলতা মিটিয়ে নতুন
করে নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগ নেন। ২০১৪
সালের মার্চ-এপ্রিল থেকে প্রতিমন্ত্রীর
প্রচেষ্টায় পার্কটির নির্মাণ প্রক্রিয়া এগিয়ে ঠিকাদার
অনুমোদন ও চুক্তি স্বাক্ষরের অবস্থায়
ঠেকে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের
লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে ভেটিংয়ের
অপেক্ষায় বিলম্বিত হচ্ছিল এই নির্মাণ চুক্তি।
সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অফ কালিয়াকৈর হাই-
টেক পার্ক প্রকল্পের পরিচালক এএনএম সফিকুল
ইসলাম টেকশহরডটকমকে জানান, ভেটিংসহ সব
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অবশেষে রোববার
চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে।
পার্কটি নির্মাণে সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড
মার্চেন্টিয়াল কর্পোরেশন (এসআইএমসিএল) এবং
ভারতীয় কোম্পানি ইনফিনিটির যৌথ কনসোর্টিয়াম
এসআইএমসিএল-ইনফিনিটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর
হওয়ার কথা ছিল গত ৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু চলতি
বছরের জানুয়ারিতে চুক্তি সম্পাদনের কনসেশন
এগ্রিমেন্ট আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য
পাঠানো হলে তা বিলম্বিত হচ্ছিল। তখন জুনাইদ
আহমেদ পলক জানিয়েছিলেন, সত্যিকার অর্থেই
কাজটি আমরা শতভাগ বিশুদ্ধতা রেখে করতে চাই।
আমাদের হাইটেক পার্কের নিমার্ণ প্রক্রিয়া ও
কাজ দেখে বিদেশীরা যাতে বিনিয়োগে
আগ্রহী হয় তার সব ব্যবস্থা আমরা ঠিক রাখতে
চাই।
তিনি তখন বলেছিলেন, বিনিয়োগকারীদের
জন্য আইনগত সুরক্ষাসহ তারা আমাদের দেশে
বিনিয়োগ করে যেন স্বস্তি অনুভব করে তার
জন্য ১২টি বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং
প্রয়োজন। নির্মাণ প্রক্রিয়া হতে শুরু করে
বিনিয়োগ ও হাইটেক পার্কের পরিচালনা
সবকিছুতেই স্বচ্ছতা ও সফলতার উদাহরণ রাখতে
চাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। এরপর
এপ্রিলে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের ভেতরের
রাস্তা উদ্বোধন ও সড়কবাতি নির্মাণ কাজের ভিত্তি
প্রস্তর স্থাপনকালে পলক জানিয়েছিলেন, দুই
মাসের মধ্যেই ডেভেলপারদের সঙ্গে চুক্তি
স্বাক্ষর করা হবে।
২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল
মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি
এসআইএমসিএল-ইনফিনিটিকে হাইটেক পার্কের
নির্মাণ অনুমোদন দেয়। হাইটেক পার্ক
কর্তৃপক্ষ এই কনসোর্টিয়ামকে কার্যাদেশ
প্রদানের অনুমতির জন্য মন্ত্রিসভার কমিটিতে
প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল। এদিকে হাইটেক পার্ক
ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎ বিল ও
জোগানদার সেবার ক্ষেত্রে কর মওকুফ
পাচ্ছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে
অর্থমন্ত্রী এ কর মওকুফের প্রস্তাব করেন।
এছাড়া হাইটেক পার্কের ডেভেলপার এবং এ সব
অঞ্চল বা পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য
দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের
উদ্যোগও গ্রহণ করছে সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে নতুন
উদ্যমে কাজ শুরুর আগে এই হাইটেক পার্কের
নির্মাণে টেকনোলজি পার্ক মালয়েশিয়াকে
ঠিকাদার হিসেবে নির্বাচিত করা হলেও তারা কাজ শুরু
করতে পারেনি। তখন এ কোম্পানির স্থানীয়
অংশীদার ঋণখেলাপি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির
কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। কোম্পানিটি আদালতে
গেলেও টেকনোলজি পার্ক আর কাজ পায়নি।
সে বছর ফেব্র“য়ারিতে হাইকোর্ট এ বিষয়ে
সিদ্ধান্ত জানালে মার্চে নতুন করে দরপত্র জারি
করে হাইকেট পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরপর নতুন
টেন্ডারে কাজ পেতে যে সাতটি কোম্পানি
আবেদন করেছিল সেগুলার মধ্যে আগের
দফায় কাজ পাওয়া টেকনোলজি পার্ক মালয়েশিয়াও
(টিপিএম) ছিল। যৌথভাবে অপর এক মালয়েশিয়ান
কোম্পানি ফাইবার এডকমের সঙ্গে কাজ
পেতে আবেদন করেছিল তারা। অপর
কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেশীয় কোম্পানি
মীর টেলিকম ও ইউএসএর জীবন
টেকনোলজি এককভাবে এবং রেজা
কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে যৌথভাবে, অপর
দেশীয় কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন
এককভাবে এবং ভারতীয় কোম্পানি
ইনেফোটেকের সঙ্গে যৌথভাবে প্রস্তাব
দিয়েছিল।
এ বিষয়ে হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা
পরিচালক (এমডি) হোসনে আরা বেগম (এনডিসি)
বলেন, হাইটের্ক পার্কে ৫টি ব্লকের মধ্যে
২টি ব্লকের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। আর অবশিষ্ট
ব্লকের কাজ শুরু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অবশিষ্ট একটি ব্লক থাকবে হাইর্টেক পার্ক
অথরিটির প্রশাসনিক কাজের জন্য। তিনি বলেন,
হাইটেক পার্ক নির্মাণ হলে দেশেই তৈরি হবে
নিত্যব্যবহার্য প্রযুক্তি পণ্য। দেশের নির্মিত
সফটওয়্যার দিয়েই চলবে ব্যাংক, বিমা, কলকারখানা,
অফিস-আদালত। স্বপ্নটা ছিল এমনই। যা এখন বাস্তব
হতে যাচ্ছে। আর এর শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৯৯
সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সভাপতিত্বে বিনিয়োগ বোর্ডের ১২তম
বোর্ডসভায় সিদ্ধান্ত হয় দেশে একটি হাইটেক
পার্ক স্থাপনের। এরও অনেক আগ থেকে
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে দেশ
বিশেষ একটি জায়গায় রয়েছে বলে দাবি জানিয়ে
আসছিলেন তথ্য-প্রযুক্তি খাতের
বিনিয়োগকারীরা। তিনি বলেন, আর এসব সুবিধায়
হাইটেক পার্ক কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে
সফটওয়্যার ও হার্ডঅয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
গড়ে উঠবে কলসেন্টার, টেলিযোগাযোগ
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানেই তৈরি
হবে বিশ্বমানের পণ্য। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। কমবে মেধা
পাচার। এই স্বপ্ন নিয়েই শুরু হচ্ছে হাইটেক
পার্কের পথচলা বলে তিনি জানান।
0 comments:
Post a Comment