Thursday, September 3, 2015

উত্তরবঙ্গের ক্রীড়াঙ্গনে এখনো সমীহ জাগানো এক জনপ্রিয় ক্লাবের নাম সিরাজগঞ্জ মোহামেডান

এলিস বচ্চনঃ
ঊনিশ শতকের গোড়ায় ভারতীয় উপমহাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ভারত ভূ-ভাগের পর ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জন্ম হয় চল্লিশ দশকের শেষার্ধে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের পরবর্তী সময়ে কলকাতায় কিছু সংখ্যক মুসলিম খেলোয়াড় পূর্ববঙ্গের তথা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা ফুটবল লীগ গোড়াপত্তনের সাথে সাথে সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হলো ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
নবাব খাজা সলিমুল্লাহ, শাহজাহানসহ আরো অনেক ক্রীড়াবিদ মিলিয়ে ঢাকা মোহামেডানকে সুসংগঠিত ক্লাব গড়ে তোলেন। ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তান ফুটবল লীগ আসরে ধীরে ধীরে ঢাকা ফুটবল লীগে পঞ্চাশ ও ষাট দশকে ঢাকা মোহামেডান যথেষ্ট শক্তিশালী ও দুর্ষর্ষ একটি শ্রেষ্ঠ দল গড়ে ওঠে। ফুটবল লীগের সেরা মর্যাদার একটি অন্যতম সেরা ক্লাবের স্বীকৃতি পেলো।
দেশ স্বাধীনতা উত্তর সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে ঢাকা মোহামেডান ধারাবাহিকভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ফুটবল ধারা অব্যাহত রাখে। আজও তা বহাল তবিয়তে রয়েছে ঢাকা মোহামেডানের ঈর্ষণীয় সাফল্যমালা। কী ফুটবলে, কী ক্রিকেটে, কী হকিতে। সব খেলাতেই যেনো ঢাকা মোহামেডানের শ্রেষ্ঠত্বের দাপট। যা এখনও সচল রয়েছে।
ফুটবল শিরোনামের প্রধান আলোচনায় সিরাজগঞ্জ মোহামেডানকে ঘিরে ঘরের ভেতর ও বাইরে ফুটবলের টক-ঝাল-মিষ্টি’র উপর একটু আলোকপাত করা যাক। তখনকার দেশের ফুটবল ছিল পূর্ণ জোয়ারের যুগ। সেই সময়ে বাংলাদেশের ফুটবল আবহাওয়ার মেজাজের চরিত্রটি ছিল পুরোদমে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সেই জোয়ারের তোড়ে সিরাজগঞ্জ মোহামেডানের পূর্ণ পারঙ্গমতার পথ দেখায় আশি দশকের শেষপ্রান্তে অর্থাৎ ১৯৮৫ কিংবা ১৯৮৬ সালে।
বোধ করি, পূর্ব পাকিস্তান আমলে ইয়ং স্টার ক্লাবের সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় ও আমলাপাড়ার উকিল মরহুম হায়দার আলীকে আহ্বায়ক করে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠিত হয়। কখন, কিভাবে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান গড়ে উঠলো সেই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না কিংবা এই প্রসঙ্গে কারো কাছে কোনো তথ্য নেই। এমন কি তারিখ বা সালও নেই। কিছুই নেই। মনে করার মতো শুধুই দালিলিক পত্র লেখা যেতে পারে। যাই হোক, সেই প্রতিকূল-অনুকূল পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকজন ফুটবলারাগীরা সিরাজগঞ্জ মোহামেডান ক্লাব বা দল গঠনের তাগিদ অনুভব করেন। এর মধ্যে জড়িত ছিলেন বাহিরগোলার আবদুল ওয়াহাব, বিএ কলেজ রোডের মরহুম জয়নাল আবেদীন, আমলাপাড়ার আবদুল পাশা, মাড়োয়ারী পট্টি’র আজাদুর রহমান আজাদ, আমলাপাড়ার জাহিদুর রহমান পীর, কালীবাড়ীর আবদুল ওয়াহাব, টিএম শামীম পান্না, গোপাল চন্দ্র বসাকসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এরাই উষালগ্নে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সিরাজগঞ্জ মোহামেডানের সক্রিয় ক্লাব কর্মকর্তারা অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর দীর্ঘপথ পরিক্রমায় পেরিয়ে আজ তা ধরে রেখেছেন। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় বদ্যন্যতায়। কিছু ভুল-ক্রুটি থাকলেও কিন্তু সেটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
সূত্রমতে, সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ১৯৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ১ম বিভাগ ফুটবল লীগ বা জেলা ফুটবল লীগে প্রথমবারের মতো নাম লিখিয়ে তাদেও আবির্ভাব ঘটায়। এই সদ্যজাত নতুন উদ্ভিদ দলটি আবার ক্রীড়াঙ্গনের ময়দানের পদচারণায় ‘জেলা ফুটবল লীগ প্রতিযোগিতা’র আসরে নামিয়ে দেয়। শহীদ শামসুদ্দিন স্টেডিয়াম মাঠে খেলতে আসা সিরাজগঞ্জ মোহামেডানের খেলোয়াড়ের খেলা দেখে দলীয় সমর্থকের মাঝে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করা, হৃদয়ের চাঞ্চল্যের সাফাই গাওয়া আর ফুটবল লীগের আবির্ভাবে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান দলগত সাফল্য পাওয়ার প্রাপ্তি ইত্যাদির ঘটনার মধ্যেই সিরাজগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনে নতুনভাবে পদার্পণ ঘটে। শুধু তাই নয় সিরাজগঞ্জ মোহামেডান এও জানিয়ে দেয়, ‘তারাও উঠে আসছে’।
আর উঠেও এসেছিল সিরাজগঞ্জ মোহামেডান। ১৯৯১ এবং ২০০৩ সালে জেলা ফুটবল লীগের শিরোপা অর্জনের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে বিশাল প্রাপ্তির ঘটনা। এটিও কিন্তু সম্ভব হয়েছিল সিরাজগঞ্জ মোহামেডানের বেশ কয়েকজন ক্রীড়া নিবেদিত প্রাণ কর্মকর্তাদের হৃদতাপূর্ণ, অদম্য পরিশ্রম, সাধনা, প্রচেষ্টা, সঠিক পদক্ষেপ, ক্রীড়া দক্ষতার ছাপ আর সময়মতো সক্রিয় ভূমিকা পালনে ও আর দলীয় কোচ-খেলোয়াড়দের ইতিবাচক ক্রীড়া মুন্সীয়ানার গঠনে এবং ক্রীড়ার সংস্পর্শে এবং কঠিন প্রতিকূল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সহজ উপায়ে মিলিয়ে নেয়ার ফলাফল লাভে সহায়তা লাভ করা সম্ভবপর হয়েছিল।
পরবর্তী কালে সর্বশেষ চমৎকার দলীয় ক্রীড়ার দক্ষতার ছাপ সকলের হৃদয়ে মন জয় করতে সমর্থ হয়। যখনই তখন ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় জাতীয় নিটল টাটা ফুটবল টুর্নামেন্টে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান পরিণত হয়ে উঠলো বাংলাদেশের সেরা ১০টি ক্লাবের একটি অন্যতম সেরা দলের মর্যাদা পাওয়া। এখন সেই সিরাজগঞ্জ মোহামেডান নিয়ে নতুন করে পরিচয় দেয়ার কিছুই নেই। সিরাজগঞ্জ মোহামেডানকে নিয়ে সত্যি কথা বলতে গেলে অন্যান্য জেলার চেয়ে উত্তরবঙ্গের তথা সিরাজগঞ্জের ফুটবল ক্রীড়াঙ্গনে বেশ সমীহের সাথে উচ্চারিত হবে।
একটু শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হয়। সম্মাণ আর সম্মোহণের কুর্ণিশ দেখাতে হয়। সেই জনপ্রিয় ক্লাবের একটি নাম সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। শুধু এই নামই কী যথেষ্ট?

0 comments:

Post a Comment