Wednesday, September 9, 2015

কেউ সাহায্য নিয়া আইসে না

 

স্বপন চন্দ্র দাসঃমেলা মানুষই আইসে, স্যুট কোট পড়া বাবুরা আইসে, ক্যামেরা দিয়্যা ফটোক তোলে। আঙ্গরে হাল-হকিকত জিজ্ঞাস করে। কিন্তু কেই সাহায্য নিয়া আইসে না। কয়্যাক দিন আগে মেম্বর সাব ১০ কেজি চাইল দিছিল, অ দিয়্যা আর কদ্দিন চলে। ২৩ দিন ধইর‌্যা পানির মধ্যে ভাইসতাছি, খবর নেয় না কেউ। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর-সোনামুখী আঞ্চলিক সড়কের ওপর তাবু গেঁড়ে সংসার পাতা টুবুলি বেওয়া ক্ষোভের সঙ্গে বললেন কথাগুলো।তার কথার সঙ্গে সুর মেলালেন একই এলাকার গৃহবধূ মনোয়ারা খাতুন, মুক্তিযোদ্ধা গাজী আলতাফ, মসজিদের মুয়াজ্জিন বোরহান, কৃষি শ্রমিক ময়না শেখ, মমতাজ আলী, সোবাহান, রফিকুল, শাফিসহ অনেকেই। কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের বিলচতল গ্রামের সাদ্দাম, সুজন, প্রতিবন্ধী ফুয়ারা খাতুন, বাবলু, কার্তিক রবিদাস, মোহাম্মদ আলী, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিয়ারঘাট এলাকার কবির মাঝি, জোছনা খাতুন, পুঠিয়াবাড়ী এলাকার রফিকুল ইসলাম, চৌহালী উপজেলার খাস পুকুরিয়া গ্রামের সোনা মিয়া, ফরিদুল, বারেক, শরিফুল, কালুসহ পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ জানালেন তাদের দুর্ভোগের কথা। 

সকলেরই দাবি মানুষের কষ্ট দেখতে কেউ এগিয়ে আসে না। মাঝে মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা খোঁজ-খবর নিয়ে তালিকা করে যায়। কিন্তু কোনো সাহায্য আসে না। 
বন্যার মৌসুম প্রায় কেটেই গিয়েছিল, অন্যান্য বছরের তুলনায় সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল এ বছর। কিন্তু আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে দুই কূল উপচে পড়ে যমুনার। তাতে এক সপ্তাহের মধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। ডুবে যায় শত শত হেক্টর জমির ফসল। আগস্টের শেষ দিকে পানি কমতে শুরু করায় কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচে জনগণ। কিন্তু হায়! আবার যমুনার উগ্ররূপ, আবারো ফুলে ফেপে ওঠা যমুনা ভাসিয়ে নেয় তার তীরবর্তী নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষগুলোর আশা আর স্বপ্ন।একে তো পানিবন্দি, তার ওপর কাজকর্ম না থাকায় অভাব-অনটনে জর্জরিত এ অঞ্চলের অসহায় মানুষগুলো। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বেশ কিছু পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা এ বন্যায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট চরমে উঠেছে। পাশাপাশি রয়েছে গো-খাদ্যেরও সংকট।  
এদিকে বন্যা কবলিতদের দাবি, তাদের সাহায্যার্থে সরকারি, আধা সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা সেভাবে এগিয়ে আসেনি।
মাইজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ইয়াকুব আলী বাংলানিউজকে জানান, দুই দফা বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চললেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে না। 
মেঘাইয়ের কলেজ ছাত্র মিলনের দাবি, এনজিওগুলো প্রতিবছর বন্যার আগে পরে সাহায্য সহযোগিতা করলেও এবার আর তাদের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না।
চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা স্কুল শিক্ষক আবু ইয়াহিয়া জানান, উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলেই পানি ঢুকেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। এতোকিছুর পরও প্রয়োজন মতো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি বন্যার্তদের কাছে। 
কাজিপুরের মাইজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বিলচতল গ্রামের শহীদুল ইসলাম, নতুন মাইজবাড়ীর ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ও কাজিপুর সদর ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বন্যার্ত এলাকায় গেলেই অসহায় মানুষগুলো ঘিরে ধরে। লিস্টে তাদের নাম লিখতে বলে। কিন্তু আমরা অসহায়, কিছুই করতে পারছি না। 
মাইজবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার জাহাঙ্গীর আলম, নিশ্চিন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক স্বপনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান,  প্রতিবার বন্যার আগে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে আসে। কিন্তু এবার কেউ আসেনি। 
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, সরকারিভাবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। মুসলিম এইড নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ২৫টি পরিবারের মধ্যে কিছু ত্রাণ বিতরণ করেছে। এছাড়া আর কোনো সংস্থা এখনো এগিয়ে আসেনি। 
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুইদফা বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ২৩৩টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কোথাও ২৩ দিন, কোথাও ১৫ দিন ধরে বন্যার পানি রয়েছে। 
জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বন্যার্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ নগদ টাকা ও ১৭০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১শ’ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ টাকা বিতরণের জন্য রাখা হয়েছে।  

0 comments:

Post a Comment