Thursday, September 3, 2015

সিরাজগঞ্জ ক্রীড়াঙ্গনে ১৯৫০ দশকের ‘ইয়ং স্টার ক্লাব’

এলিস বচ্চনঃ
উষালগ্নে যারা ইয়ং স্টার ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন কিংবা অন্যান্য খেলাধুলায় অংশ নিয়েছেন, এমন ১৯৫০ দশকে সিরাজগঞ্জ মহকুমা লীগে কোনো না কোনো খেলোয়াড় জড়িত ছিলেন। আবার ফুটবল খেলা হতে অবসর নেয়ার পরও ফুটবল সংগঠক কিংবা কর্মকর্তা বা খেলা পরিচালনাকারী হিসেবে একটি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। এ রূপ একটা নাতিদীর্ঘ তালিকার বিবরণ দেয়া হলে ঐ লেখা শেষ হবে না।
ইংরেজি ভাষায় Young Star Club। বাংলায় ‘ইয়ং স্টার ক্লাব’। উচ্চারণে কখনোই ইয়াং স্টার নয়। এর বাংলা অভিধানিক অর্থ হলো-‘যুব দল’। একে আবার অন্যভাবে বাংলায় নির্ভুল ব্যাখ্যা বলা হয়েছে, ‘তরুণ দল’। যে যাই বলুক, তাতে খুব বেশি হলে এটিকে আবার ‘যুব তারা’ নাম পড়লে অভিধানে ভুল হবে। ইংরেজি ডিকশনারীর ভাষ্য অনুযায়ী ঐ স্টারকে এস.টি.ই.আর নয়, এস.টি.এ.আর পড়া উচিত। এর অর্থ-দল, সংঘ বা সংস্থা। সেকালের বেশ কয়েকজন শিক্ষিত ক্রীড়ামোদীরা ফুটবল খেলাকে ভালোবেসে একে নাম দিয়েছিলেন-‘যুব দল’ বলে। এটা মনে করা কখনো সঙ্গত হবে না যে, উপযোগী বাংলা ভাষা নির্মাণে তেমন কোনো আভাস পাওয়া না গেলেও বাংলা অভিধানের সাহায্য নেয়া দোষের কিছু নয়। বরং নির্ভুল ভাষায় আর যাই হোক এটাকে যুৎসই মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
ইয়ং মানে যুব আর স্টার মানে দল বা সংঘ। মুখে যতই ‘ইয়াং স্টার’ বলি না কেন লিখিত রূপে এটা অবশ্যই শুদ্ধ উচ্চারণ হবে ‘ইয়ং স্টার’। যদি না উপযুক্ত শব্দ মনে না হয়, তাহলে গোস্তাকি মাফ কিজিয়ে অর মুঝে মাফ কর দিজিয়ে...। এর পাশাপাশি যুবাই হোক, দল হোক এখন এটা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
উত্তরবঙ্গের অহঙ্কার এবং অত্র অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনের গর্ব ইয়ং স্টার ক্লাব এখন নতুন পথের যাত্রী হিসেবে অভিহিত হলেও এখন আর সেই ঐতিহ্যের প্রতাপ দেখা যায় না। সময় সব কিছু বদলে যায়। আর বদলেছেও। দীর্ঘদিনের আশা আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হতে যাওয়া এই ক্লাবের সারথী-মহাসারথীরা এখন নতুন রূপে নির্মিতব্য ক্লাবকে ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা আর চূড়ান্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নানা ধরণের খেলাধুলা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। এটা প্রশংসনীয় দাবিদার। বলা যেতে পারে, ইতিবাচকতার স্বার্থে তারা একটা নিদর্শন ভূমিকা পালন করছে মাত্র। ক্রীড়া সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ইয়ং স্টারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার খুব কাছ হতে যদিও অনেক পুরোনো এবং কিংবদন্তির সাফল্যের সন্ধান পাওয়া মানে বিশাল অর্জন। যে মহীরূহের কৃতিত্বের পাল্লা অনেক বেশি সাযুজ্য পর্যায়ে ধরা যেতে পারে।
পাকিস্তান আমলে এদেশীয় খেলার চিত্রধারা অনুযায়ী ফুটবল অঙ্গনে যে উদ্দেশ্য আর প্রত্যাশা এবং প্রথিতযশা খেলোয়াড় নিয়ে ১৯৫০ দশকে যে দাপুটীয়, মুন্সিয়ানা স্বাক্ষরতার পরিচয় দেয়। সেখানে সেই সাফল্যের ডানা মেলে ধরা দেয়, সেই বাস্তবায়নের রাস্তা আর মাত্রা কিন্তু যৎসামান্য অংশই অর্জিত হয়েছে-এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিশাল মহীরুহের ইতিহাস তখনকার দিনে সর্বমহলের কাছে এত বেশি মজেজা আর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যে, খেলার মাঠে এই ক্লাবের দলগঠনে কার্যতঃ ভূমিকা পালনে এবং যোগ্যতর দল হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে সবকিছুই তারা সক্ষম হয়েছে। যা দারুণ কৃতিত্বের ব্যাপার বটে! সিরাজগঞ্জ মহকুমা ফুটবল লীগে এই ক্লাব নিয়মিত অংশ নিয়েছে। ক্লাবের ইতিহাস বলতে গেলে ধারে কাছে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কিংবা খুব ভালো করে জানা যায় না।
বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে এই সিরাজগঞ্জের অভিজাত আমলাপাড়ায় অবস্থিত ইয়ং স্টার ক্লাবের ইতিহাস না শুনলে বা না দেখলে বিশ্বাস করা যেমন কঠিন, তেমনি আজকের এইদিনে অবিশ্বাস করাও তেমন অস্বাভাবিকতার কারণ হবে না। কারণ এই দলের গ্রহণযোগ্যতা আর রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে মাঠে জবাব দিয়েছে অনেকবার। প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ইয়ং স্টার ক্লাবের পক্ষে অনেকদিন ফুটবলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এরা হলেন--মৃত মীর শাহজাহান আলী ‘জ্যোতি’, আমলাপাড়া, ফুটবল কোচ। মৃত আবদুস সামাদ মিঞা মুহুরী, আমলাপাড়া। মৃত আবদুর রশিদ আহমেদ নান্নু, আমলাপাড়া। মৃত হান্নান তালুকদার, সেরা গোলরক্ষক। মৃত বীর বাহাদুর আলী, বিএল স্কুল রোড, দুই নম্বর সেরা গোলরক্ষক। মৃত আফতাবউদ্দিন আহমেদ মন্টু, সেন্টার ফরোয়ার্ড, আমলাপাড়া। মৃত সুবল চন্দ্র দাস, হাফ ব্যাক, কালীবাড়ী। মৃত ডাঃ আলী আজম চৌধুরী, ফরোয়ার্ড, আমলাপাড়া। মৃত এ্যাডভোকেট হায়দার আলী, ব্যাক, আমলাপাড়া। মৃত জয়নাল আবেদীন, বিএ কলেজ রোড। মৃত জাশের আলী, আমলাপাড়া। মৃত সেলিম, চৌবাড়ী। মৃত সেলিম উদ্দিন বাদল, আমলাপাড়া। মৃত নজরুল, কাজীপুর। মৃত জহুরুল ইসলাম রেমু, আমলাপাড়া। মৃত জয়নাল আবেদীন, (ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের নিয়মিত ফুটবল খেলোয়াড় মহিউদ্দিন ইবনুল সিরাজীর বাবা)। মৃত মীর খসরু হাসান রওশন, আমলাপাড়া। মৃত নির্মল কুমার দাস, আমলাপাড়া। মৃত বুজরুক আলী, কুঠিপাড়া। মোঃ আবদুল মান্নান তালুকদার, রাইট আউট, ধানবান্ধি। মোঃ আনোয়ার হোসেন রতু, সেন্টার ফরোয়ার্ড, আমলাপাড়া। শ্রী সূর্যকান্ত দে, ফরোয়ার্ড, কালীবাড়ী। জর্জিস, ব্যাক। নির্মল ঘোষ (নিমু), হাফ ব্যাক, হাট বয়রা। ঝরু, লেফট আউট। জিল্লুর, লেফট আউট, সলঙ্গা। নান্নু, হাফ ব্যাক। গোসাইবাড়ী। আফজাল, কাজীপুর। মোঃ নুরুল ইসলাম নীরু, ৩ নং গোলরক্ষক, কড়িতলা। নবাব আলী, হাট বয়রা। মোঃ নুরুল ইসলাম, কৈজুরী শাহজাদপুর উপজেলা। সেলিম, হাট বয়রা। খন্দকার মনোয়ার হোসেন, আমলাপাড়া। ফকির আলী, কাওয়াকোলা। ডাঃ আবুল কাশেম। শ্রী চন্ডিদাস দত্ত, আমলাপাড়া। ইব্রাহিম হোসেন, কাওয়াকোলা। মীর হোসেন, গয়লা। সৈয়দ আলী, বগাদাহ্। দেলোয়ার হোসেন, আমলাপাড়া। মাহবুবুর রহমান চাঁদ, কাজীপুর। মীর ফজলুল জাহান, আমলাপাড়া (হাট বয়রা)। বীরু ঘোষ, হাট বয়রা। বিমল ঘোষ, হাট বয়রা। নুরু (সাবেক সংসদ সদস্য, চৌহালী থানা)।

0 comments:

Post a Comment