যমুনা যে নিষ্ঠুর হয়, নিজের বেবাক কিছু হারাইয়া তা দেইখল্যাম। রাক্ষুসী যমুনা আমার সবকিছু গিল্যা খাইলো। চাইয়্যা চাইয়্যা দেইখল্যাম। কিছুই কইরবার পাইরলাম না।
বলতে বলতে কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে আসছিল প্রৌঢ় মোহাম্মদ আলীর। নিজের সবকিছু যমুনার গর্ভে হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।
যে যমুনার আশীর্বাদে জমিতে সোনার ফসল ফলিয়ে কৃষকেরা তার বন্দনা করে বেড়ায়, সেই যমুনাই আবার কৃষকের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে রাক্ষসীতে পরিণত হয়। যমুনার এ দ্বৈত আচরণ চিরন্তন। তা সত্ত্বেও তাকে ছাড়তে চায় না যমুনা তীরের মানুষগুলো। তাদের বিশ্বাস, যমুনা যেমন করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়, আবার সেই যমুনাই কৃষকের গোলা ভরে দেয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার নতুন মাইজবাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ আলী। ছয় মেয়ের জনক। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে বাপ-দাদার জমিতে নার্সারির পাশাপাশি মৌসুমী বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতেন। এলাকায় সফল কৃষক হিসেবে তার নামডাকও ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে যমুনার গর্ভে বিলীন হতে শুরু করে এই কৃষকের ভিটেমাটি ও ফসলের খেত। দুই বছরে তার ছয় বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়। আর এ বছর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে হারিয়ে যায় বাকি চার বিঘা জমিও।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোহাম্মদ আলী জানান, ১০ বিঘা জমি ছিল তার। আর সুন্দর একটি বাড়িও ছিল। দুই বছর ধরে যমুনার ভাঙনে ছয় বিঘার মতো বিলীন হয়েছিল। বাকি ছিল চার বিঘা। ওই চার বিঘা জমির প্রায় সবটাতেই ইউক্যালিপটাসের বাগান করেছিলেন। এর মধ্যে কোনোটির বয়স এক বছর, কোনোটির দেড় থেকে দুই বছর।
তারপরও নতুন করে জীবন শুরুর প্রত্যয় নিয়ে মেয়ে-জামাইদের দেওয়া টাকায় মেঘাই-মাইজবাড়ী ওয়াপদা বাঁধের সরকারি জায়গায় ছোট্ট একটি বাড়ি তৈরি করছেন তিনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম তালুকদার জানান, মোহাম্মদ আলী একজন সফল কৃষক ছিলেন। স্বচ্ছল এ কৃষকের সুখ অল্পদিনেই কেড়ে নিয়েছে যমুনা। এখন সরকারি খাস জমিতে ছোট্ট একটি কুড়ে ঘর তৈরি করছেন তিনি।
0 comments:
Post a Comment