সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের দশটি জেলা
শহরসহ সংলগ্ন শিল্প এলাকায় পুরাতন ও
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের লাইন সংস্কার ও
মেরামতের জন্য পরিচালিত হচ্ছে ‘দশ শহর’ প্রকল্প।
এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এলাকার বাইরে
এ প্রকল্পের কাজ সম্পসারণ করার কোনো উপায় নেই।
কিন্তু প্রকল্পের নীতিমালা উপেক্ষা করে
গত ১০ বছরে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার বাইরে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) অঞ্চলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধভাবে অন্তত ১০ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রকল্পের অন্য শহরগুলো হলো রাজশাহী,
বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাও ও নীলফামারী।
‘দশ শহর’ প্রকল্প এবং সিরাজগঞ্জ পিডিবির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাজে জড়িত বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ
সমিতি (পবিস) হাই কোর্টে রিট করায়
সম্প্রতি আদালত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে ৬ মাসের
নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে
এখনও তারা কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস)
সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক তুষার কান্তি
দেবনাথ জানান, “নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পবিস এলাকায় ‘দশ শহর’ প্রকল্পের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অন্তত ১০ হাজার সংযোগ দিয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
“সিরাজগঞ্জ পিডিবির সাবেক নির্বাহী
প্রকৌশলী কৃষ্ণকান্ত রায় এবং বর্তমান
আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো.
আবু হেনা মোস্তফা কামাল দায়িত্বে
থাকাকালীন এসব অবৈধ সংযোগ সবচেয়ে বেশী দেওয়া হয়।”
জেলা প্রশাসন, পিডিবি ও পবিস যৌথভাবে দ্বি-পাক্ষিক ও ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তিনি।
“এ কারণে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত
সমিতির পক্ষে আমি নিজে বাদী হয়ে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছি।”
রিটে বিদ্যুৎ ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের সচিব,
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের
চেয়ারম্যান, রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান
প্রকৌশলী, পাবনা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক
প্রকৌশলী, সিরাজগঞ্জের আবাসিক ও
নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ‘দশ শহর’ প্রকল্পের
পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে বলে
তিনি জানান।
“গত ২০ এপ্রিল রিট পিটিশন শুনানি শেষে পবিস অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে আদালত
৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।”
এদিকে পিডিবি বা দশ শহর প্রকল্পের
লোকজন আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা
করে এখনও অবৈধ সংযোগ দিয়েই যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার
বাইরে ৪/৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার বাঐতারা, ছাতিয়ানতলী, মোড়গ্রাম, বেলুটিয়া, সয়দাবাদ, কাশিয়াহাটা, বনবাড়িয়া, ছোট-চাকুলি, বড়-চাকুলী, কালিয়া হরিপুর, খোকশাবাড়ি, কুশাহাটা,
শালুয়াভিটা, মুনসুমি, চন্দ্রঘোনা,
শিয়ালকোল, চরকল্যাণী, কল্যাণী, কালিয়া কান্দাপাড়া এলাকায় ইতোমধ্যেই
‘অবৈধভাবে’ দশ শহর প্রকল্পের সংযোগ
প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া কালিয়া, মুনসুমি ও বাঐতারা গ্রামে এখনও সংযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গেল ঈদের আগে কালিয়া উত্তরপাড়ায় দেলশাদ, রাজ্জাক, মকবুল, লোকমান, মিন্টু ও সালামের বাড়ির পাশে ৭টি খুঁটি বসানো হয়েছে।
এলাকার নান্নু হুজুর, মুদি দোকানি লিয়াকত, জাতীয় জুট মিল শ্রমিক রহমান ও রাজমিস্ত্রি নুর ইসলাম বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংযোগ দেওয়ার জন্য তাদের প্রতিজন থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
সয়দাবাদ ইউনিয়নের বাঐতারা ও কালিয়া, হরিপুর ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলী এবং বহুলীর মুনসুমি গ্রামেও একইভাবে সংযোগ প্রদান
করা হয়েছে।
এসব এলাকায় গিয়ে সিমেন্টের খুঁটির
পাশাপাশি বাঁশ ও গাছে দশ শহর প্রকল্পের বিদ্যুতের তার ঝুলতে দেখা গেছে।
দশ শহর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী
মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোথায়
লাইন বসবে আর কোথায় বসবে না তা
পিডিকে জিজ্ঞাসা করেন।”
দশ শহর প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)
মোয়াজ্জেম হোসেন বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১০ শহর
প্রকল্পের সকল কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
ওই সমস্ত এলাকায় আর কাজ করার সুযোগ
নেই।”
তবে কবে থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে তা তিনি
পরিষ্কার করে বলেননি।
পিডিবির পাবনা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক
প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু উচ্চ
আদালতে রিট আছে, তাই অবৈধ সংযোগ
প্রদান করা উচিৎ নয়।”
সিরাজগঞ্জ বিদ্যুাৎ উন্নয়ন বোর্ডের
আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর ইচ্ছায় এ
ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে বলে জানান
তিনি।
পিডিবির রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান
প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১০ শহর
প্রকল্প আলাদা একটি প্রকল্প। সেখানে
আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পবিস এলাকায় অবৈধ প্রবেশের কারণে
মামলায় তাকে বিবাদী করার বিষয়ে মতামত
জানতে চাইলে তিনি বলেন, পবিসের দায়ের
করা মামলা মামলার গতিতেই চলবে।
সিরাজগঞ্জ বিদ্যাৎ উন্নয়ন বোর্ডের
আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর দেওয়ান
মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন,
“পুঠিয়াবাড়িতে সাব-স্টেশন স্থাপনের কাজ
ছাড়া দশ শহর প্রকল্পের আওতাধীন পৌর
এলাকার বাইরের সকল কাজ ইতোমধ্যেই
স্থগিত করা হয়েছে।”
অবৈধ সংযোগ প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
কান্দাপাড়ায় খুঁটি আগেই পোতা হয়েছে,
তারপর লাইন বসিয়েছে। খুঁটি পুতলে বা লাইন
টানালে, সংযোগ দিতেই হয়।
0 comments:
Post a Comment