Monday, August 24, 2015

শত বছরের সুখ-দুঃখের সাক্ষী যে

সিরাজগঞ্জের বড় পুল। শতবর্ষের নানা সুখ-দুঃখের স্মৃতি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী এ সেতুটি। শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া কাটাখালি নদীর বুকেই এর অবস্থান। তার উপর দিয়েই প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জবাসীর নানা দুঃখ-বেদনার স্বাক্ষী এই বড় পুল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচার বিরোধী সব আন্দোলন প্রত্যক্ষ করা সিরাজগঞ্জের বড় পুলটি স্থাপিত হয় ১৮৯২ সালে।
স্থানীয়রা এর নাম বড় পুল বললেও এটির প্রকৃত নাম ইলিয়ট ব্রিজ। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ১৮০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট। কোন পিলার নেই, লোহার রেলিং দিয়ে শক্তিশালীভাবে তৈরি করা হয় এটি। মূল সেতুর দু-পাড়ে বাঁকা অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮৯২ সালের ৬ আগস্ট এ সেতুটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলার গভর্নর চার্লস আলফ্রেড ইলিয়ট (ছোট লাট সাহেব)। সেই থেকে সেতুটির নামকরণ হয় ইলিয়ট ব্রিজ। তৎকালীন মহুকুমা প্রশাসক গিবসন বেলের তত্ত্বাবধানে হার্টল্যান্ড কোম্পানি এটি নির্মাণ করে।
ব্রিজটি নির্মাণে তৎকালীন ব্যয় হয় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে এলাকার জমিদার ও বিত্তবানদের চাঁদায় ত্রিশ হাজার এবং বাকী ১৫ হাজার টাকা দেন পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুলিয়াস।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা গাজী ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এ সেতুটি নির্মাণ ছিল সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়, যাতে করে কাটাখালি নদী দিয়ে নৌযানগুলো যাতায়াতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়।
ডা. রাজা আরও জানান, ওই সময় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর নৌ-বন্দর থেকে জাহাজযোগে বিভিন্ন মালামাল কাটাখালি নদী দিয়ে মহুকুমার অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ হতো। এছাড়াও তৎকালীন সিরাজগঞ্জের একমাত্র শিল্প কারখানা সিরাজগঞ্জ জুটমিলের কাঁচামাল  ও উৎপাদিত পণ্য এ কাটাখালি নদী দিয়েই স্থানান্তর করা হতো। এসব দিক চিন্তা করে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রকৌশলী ব্রিজটি নির্মাণ করেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলো- বড়পুল নির্মাণের ১২০ বছর পর ২০০৬ সালে সেই কাটাখালি নদীর উপর দিয়েই আরো দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, যা কাটাখালি নদীকে আরও সংকুচিত করেছে।

0 comments:

Post a Comment