Wednesday, August 12, 2015

কিডনি অকেজো, তবুও জিপিএ ৫ পেয়েছে সিরাজগঞ্জের কলি

শরীরের দুটি কিডনির কোনোটাই কাজ করে না। প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিন্তু এর পরও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পেয়েছেন জিপিএ ৫, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।
সিরাজগঞ্জের অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থীর নাম
জাহারা লায়লা কলি। গত রোববার এইচএসসি পরীক্ষার ফল শুনে আনন্দের চেয়ে দুশ্চিন্তাই বেশি ভর করেছে কলির চোখে-মুখে। স্বপ্ন ছিল,
পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবেন। কিন্তু শরীরে
বাসা বেঁধে আছে র্যাপিডলি প্রগ্রেসিভ
গ্লোমারিউলোনেফ্রাইটিস। তাই ভালো ফলের
পরও শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে।
সিরাজগঞ্জ শহরের গোশালা মহল্লার ভাড়া বাড়িতে মা আর তিন ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন কলি। এত প্রতিকূলতার পরও এইচএসসিতে তাঁর ভালো ফল করার প্রতিক্রিয়া জানতে এই প্রতিবেদক তাঁদের বাসায় যান।
সেখানে কলি তাঁকে বলেন, ‘আজকে আমার
রেজাল্ট দিয়েছে। আমি যখন পরীক্ষা দিই, তখন
আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম। তো আমি এতটা ফল আশা করিনি, যা আজকে আমি করতে পেরেছি। তবে আমার আরেকটু বেশি আশা ছিল, যা পূরণ হয়নি। আমি এই আশাটা পূরণ করতে চাই। কিন্তু আমার শরীর সেটা পারমিট করে না।’
ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে কলি আরো
বলেন, ‘আমি চাই আরেকটু ভালোভাবে পড়াশোনা করে দেশের উন্নতি করতে। কিন্তু আমার আর্থিক কন্ডিশন (অবস্থা) আর শরীরের অবস্থা অতটা ভালো না দেখে আমি করতে পারতেছি না। তো, দেশের যাঁরা সামাজিক পারসন (ব্যক্তিবর্গ) আছেন, তাঁরা যদি একটু হেল্প (সাহায্য) করেন, তাহলে সেটা ভালো হবে।’
কলির মা ভাবতেই পারেননি, মেয়ে এত অসুস্থতা
নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমি
তো ধারণাই করতে পারিনি, ওকে দিয়ে পরীক্ষা
দেওয়াতে পারব। এটা আমার আশাই ছিল না। তার পর যখন পরীক্ষা দেয়, তখন একটু বেশি বেশি প্রেশার (চাপ) থাকত। কারণ, মেয়ে অসুস্থ। তবুও আশা আছে, ও যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে আর কী।’
কখনো কখনো পরীক্ষার আগের দিন কলির
কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হতো। সে সময়ের তাঁর যন্ত্রণার কথা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠে
ভাইয়েরা।
ওই ছাত্রীর বড় ভাই রতন বলেন, ‘ওর তো
ডায়ালাইসিস চলতেছিল। তো, ডায়ালাইসিসে এমনও দিন গেছে, যে ডায়ালাইসিস দিয়ে নিয়ে আসছি। পরের দিন পরীক্ষা। কোনোমতে ওকে যায়া পরীক্ষার হলে বসায়া দিছি। অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিনিয়ত ও যুদ্ধ করে পরীক্ষা দিছে।’
কলির অপর বড় ভাই রতন বলেন, ‘ওর (কলি) রেজাল্ট শুনে আমরা যতটা না খুশি, তার চেয়ে বেশি চিন্তিত।
কারণ গত এক বছর হলো, ও দুটো নষ্ট কিডনি
নিয়ে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। ও ডাক্তার হতে
চেয়েছিল। কিন্তু ওকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে
আর্থিক সংগতি দরকার, তা আমাদের নেই। কলির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে কি না, তা আমরা জানি না।’
সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে
এইচএসসিতে অংশ নিয়েছিলেন কলি। তাঁর ফলে শিক্ষকদের সবাই খুশি। একই সঙ্গে তাঁরা শঙ্কিত ছাত্রীর ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে।
কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মনোয়ারুল ইসলাম
বলেন, ‘কলি সায়েন্স (বিজ্ঞান) থেকে পরীক্ষা
দিয়েছিল। তার দুটো কিডনিই নষ্ট অবস্থায়। সে
চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যেই পরীক্ষা দিয়ে সে
জিপিএ ৫ পেয়েছে। এ জন্য আমরা সিরাজগঞ্জ
কলেজের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই
এবং আমরা এ জন্য আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদের দেশের বিত্তবান যাঁরা আছেন, তাঁদেরকে আমি আবেদন করব যে, এই মেয়েটিকে আপনারা সহযোগিতা করবেন, যাতে কিডনি সমস্যাজনিত যে রোগে ভুগছে, সে যেন চিকিৎসা করে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।’

0 comments:

Post a Comment