Tuesday, August 4, 2015

পাখির অভয়ারণ্য গড়ছেন শাহজাদপুরের মামুন-ইমন

গ্রামে আর সন্ধ্যা ঘনাতেই আগের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে নীড়ে ফেরা পাখির দেখা মেলে না।
নিত্য উষায় পাখির কুজনে ঘুম ভাঙে না,
গ্রাম লাগোয়া কাশবনে কিচির-মিচিরও
মিয়ম্রাণ হয়ে আসছে দিন দিন।
কি বুকের ছাতিফাঁটা গ্রীষ্ম, কি ঘোর
বর্ষা, হাঁড় কাপানো শীত কিংবা বসন্ত,
পাখির কলতানে আর মুখরিত হয় না গ্রাম।
আবার কি করে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির
গাছে, বনে কি জঙ্গলে ফিরিয়ে ‍আনা
যায় দোয়েল, কোকিল, ফিঙে, চড়ুই,
টিয়াসহ গ্রাম বাংলার সব পাখিকে।
এমন ভাবনা থেকেই নিজের গ্রামকে
পাখির গ্রাম হিসাবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ
নেন গ্রামের দুই যুবক মামুন ও ইমন।
শুরুতেই গ্রামের মুরুব্বিদের
অনেকেই ‍তাদের এ চেষ্টাকে পাগলামি
অভিহিত করেছেন। সমবয়সীরা আড়ালে
টিপ্পনী কেটেছেন, ব্যঙ্গ করেছেন। এখন
তাদের সহায়তাতেই গ্রামকে পাখির
অভয়ারণ্য হিসাবে গড়ে তোলার পথে
এগিয়ে চলছেন পাখিপ্রেমী মামুন ও ইমন।
এরইমধ্যে তাদের কাফেলায় পেয়েছেন
পাখিপ্রেমী গ্রামের আরো কিছু তরুণ-
যুবককে।
তাদের লক্ষ্য গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের
বাহক নানা প্রকার বিলুপ্ত হতে যাওয়া
পাখির জন্য নিরাপদ বাসস্থান তৈরির
মাধ্যমে পাখির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি
এবং গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য
ফিরিয়ে আনা।
এমনই ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেছে
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার
বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামে।
পাখিপ্রেমী মামুন ও ইমনের ঐকান্তিক
প্রচেষ্টায় এ গ্রামে ধীরে ধীরে গড়ে
উঠছে পাখির অভয়াশ্রম। নিজেদের
অর্থায়নে ও আরো ৪/৫ জনের সহায়তায়
তারা পাখিদের জন্য জন্য গাছে-গাছে
করছেন পাখির ঘর-সংসার।
এজন্য গত সাড়ে তিন মাসে তারা মোট
২৩৭টি গাছে মাটির কলস বেঁধে
দিয়েছেন। দেশীয় পাখিগুলো যাতে ওই
কলসে নিজ নিজ আশ্রয় খুঁজে নেয়।
এরইমধ্যে এ কাজে বেশ সফলতা অর্জন
করেছেন তারা।
বেশ কয়েকটি মাটির কলসে পাখিরা
এসে বাসা বেঁধেছে। এরই কয়েকটিতে শুরু
হয়েছে প্রজনন প্রক্রিয়াও।
গত ২৯ জুলাই সরেজমিনে আগনুকালী ঘুরে
উদ্যোক্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা
বলে এসব তথ্য জানা যায়।
তারা জানান, গ্রামের প্রতিটি রাস্তার
ধারে, পুকুরের পাড়ে, জমির পাশে,
বিভিন্ন বাড়ির গাছের ডালসহ গ্রামের
আনাচে-কানাচের বিভিন্ন গাছের
মগডালে কলস বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ফলে গাছে-গাছে আসতে শুরু করেছে
পাখি।
এছাড়াও আশপাশের লিছিমপুর,
রায়পাড়া, সিকদার পাড়া, মধ্যপাড়া,
সাতবাড়ীয়া, ভেন্নাগাছি, লক্ষ্মীপুরসহ
১০টি গ্রামকেও এর আওতায় এনে গাছে
কলস বেঁধে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ গ্রামের যুবক শাহীন আলম জানান,
প্রথম দিকে গ্রামবাসী এদের পাগল
বললেও এখন সবাই নানাভাবে তাদের
কাজে উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করছে।
সুজন ও নবী জানান, কিছু কলসে শালিক
পাখি বাসা বেঁধেছে। বেশ কয়টিতে
বাচ্চাও ফুটেও। অন্য প্রজাতির পাখিদের
মধ্যে দোয়েল পাখি ওই কলসে যাতায়াত
করলেও স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধছে না।
একই গ্রামের যুবক কামরুল জানান, প্রথমে
মামুন তার নিজ বাড়ির গাছে পাঁচটি
কলস বাঁধেন। কিছু দিন যেতেই এসব
কলসে আশ্রয় নেয় শালিক পাখি। এ
থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মামুন ও ইমন মিলে শুরু
করেন গ্রামের গাছে কলস বাঁধার কাজ।
কথা হয় এ আন্দোলনের মূল নায়ক মামুন
বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানান, পাখি
প্রকৃতির অন্যতম সম্পদ। পাখিদের অবাধ
বিচরণ নিশ্চিত করা না গেলে ধীরে
ধীরে সব প্রজাতির পাখিই বিলুপ্ত হয়ে
যাবে।
দেশ থেকে ৪৭ প্রজাতির দেশীয় পাখি
বিলুপ্ত হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি
বলেন, তাই গত বছরের ডিসেম্বর থেকে
গাছে গাছে প্লাস্টিকের বক্স সেট করা
মাধ্যমে পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টির উদ্যোগ
নেই। তবে প্লাস্টিকের বক্সে সফলতা না
পাওয়ায় চলতি বছরের মার্চ থেকে
মাটির কলস বাঁধার কাজ শুরু করি। শালিক
পাখি বাসা বাঁধলেও অন্যান্য পাখির
মধ্যে দোয়েল আসা যাওয়া করছে। অন্য
জাতের পাখির আবাসস্থল গড়ার
লক্ষ্যেও কাজ চলছে।
মামুন জানান, পাখি সংরক্ষণ, প্রজনন ও
নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে
’দি বার্ড সেফটি হাউজ’ নামে একটি
সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন
তারা।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণি
সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই
বাংলানিউজকে জানান, মামুন নিজ
উদ্যোগে আগনুকালী গ্রামসহ আশপাশের
গ্রামগুলোতে পাখির জন্য আবাস্থল
তৈরি করছেন। এটি মহতী উদ্যোগ। তাকে
উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ
প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার
(ইউএনও) শামীম আহম্মেদ বলেন, পাখির
জন্য অভয়াশ্রম সৃষ্টির ব্যক্তিগত এ
উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে
তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়াও
অন্যান্য গ্রামেও যাতে এ ধরণের উদ্যোগ
নেওয়া হয় সে জন্য উপজেলা প্রশাসন
থেকে উৎসাহের পাশাপাশি সহায়তাও
করা হবে।

0 comments:

Post a Comment