Sunday, August 16, 2015

নড়বড়ে সাঁকোতে দিনের পর দিন

মানুষের প্রতিদিনকার যাতায়াতের রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে একটি বাঁশের সাঁকো।
একেবারেই নড়বড়ে। এই বুঝি ভেঙে পড়ে! পা রাখা মাত্রই দুলতে শুরু করে
সাঁকোটি। যমুনা নদীর একটি ক্যানেলের (বাঁধ) উপর এভাবেই সাঁকোটির অবস্থান। প্রতিদিন প্রায় দু’হাজার মানুষ এই বাঁধের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। সরকারি-
বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকেই
এখানে বসবাসরত মানুষের জন্য তৈরি
হয়নি কোনো পুল বা সেতু।
তবে একজন জাগলেন। একটি সেতু নির্মাণ করে দেবার ব্যাপারে তিনি স্থানীয়
মেম্বার, চেয়ারম্যানের দরজায় কড়া
নাড়লেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কেউই
তাকে পাত্তা দেননি। অবশেষে তিনি
নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন, এভাবে আর
বসে থাকা যায় না। মানুষের পারাপারের জন্য কিছু একটা করতেই হবে।
তিনি মানুষকে সংগঠিত করার কাজ শুরু
করলেন। যাকেই সামনে পান তার সাথেই
কথা বলেন। সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে
একটি বাঁশের সাকো তৈরির ব্যাপারে।
তাতে স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া
পাওয়া যায়।
২০ টাকা থেকে সাধ্যমতো যে যা দেয়
তাই নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগে নির্মাণ
করা হয় একটি বাঁশের সাঁকো। এই বাঁশের
সাকো নির্মাণের নেপথ্য নায়ক কবির
মাঝি।
সিরাজগঞ্জ শহর সংলগ্ন বিয়ারা বাঁধের
মানুষ তাকে এক নামে চেনে। নিজেই
নৌকা দিয়ে মানুষকে পারাপার করেন।
এভাবেই তার নামের সাথে যোগ হয়েছে
মাঝি। নামের সাথে পেশার পরিচিতি
রয়েছে যার।
কবির মাঝি এ ব্যাপারে
বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিন
মানুষকে নদী পারাপার করি। যখন দেখি
মানুষ নদী পার হতে পারে না তখন আমার খুব খারাপ লাগে।
একটি মাত্র সেতুর জন্য এই ভোগান্তি।
তাই আমরা সম্মিলিতিভাবে কেউ ২০
টাকা, কেউ ৩০ টাকা করে দিয়ে যার
যার সাধ্যমতো অর্থ সংগ্রহ করে এই
বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, মেম্বার,
চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি
কানাকড়িও পাওয়া না গেলেও সদর
ইউএনও ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন।
বয়োবৃদ্ধ সিকিম আলী, মুদি দোকানদার
সাজু ও আলতাফ হোসেনসহ এলাকার
অনেকেই জানান, এটি যমুনা নদীর
বাইপাস ক্যানেল। এটি আমাদের
যাতায়াতের একমাত্র পথ। ৮৮’র পর থেকে এটি এভাবেই আছে। বর্ষা মৌসুমে
পারাপারের কষ্ট দূর করতে আমরা নিজ
উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে বাঁশের সাকো
নির্মাণ করি।
গ্রামের অপর এক বাসিন্দা নুর ইসলাম
জানান, বৃদ্ধ মানুষ এ সাঁকো দিয়ে
একেবারেই পারাপার হতে পারেন না। এ
এলাকায় একটি মসজিদও আছে। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বৃদ্ধ মুসল্লিরা
মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন না।
সাঁকো পারপার হওয়ার সময় পানিতে
পড়ে আহত একজনের নাম মালেকা বেগম।
তিনি নিজেই এগিয়ে এসে বাংলানিউজ
টিমকে জানান, সাঁকো ভেঙে আমি
একবার পড়ে গিয়েছিলাম। এই নড়বড়ে
সাঁকোর কারণে যাতায়াতে ভীষণ
অসুবিধা হয় সবারই।
এলাকার বাসিন্দা নাজমা ও সেলিনা
বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কথা
না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু দুর্বল সাঁকোর
কারণে বাচ্চারা বইপত্র নিয়ে স্কুলে
যেতে পারে না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
(ইউএনও) ব্রেনজন চাম্বুগং
সিরাজগঞ্জ প্রতিদিনকে জানান, নদী তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় আপাতত ওখানে ব্রিজ করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তবে বাঁশের সাঁকোটিকে শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment