বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : রমজান এলেই ঈদের প্রস্তুতিও শুরু। কারণ একটা মাস কোথা দিয়ে চলে যাবে তা বোঝাই যাবে না। ঈদের মূল আকর্ষণই থাকে ঈদের শপিং, আর শপিং মানেই নতুন কাপড়, জুতো ইত্যাদি।
অনেকে আগেভাগে কিনে মুক্ত হয়ে যেতে পছন্দ করেন। অনেক আবার দেখেশুনে, ঘুরেফিরে সময় নিয়ে কেনেন। রঙ এর শাড়ি রয়েছে বেলকুচির উৎপাদিত হাতে গড়া নতুনত্ব ডিজাইন সবার পাশে বন্ধুর মতো। এজন্যই শবেবরাতের পর থেকেই ঈদ কালেকশন তুলে এনেছে বেলকুচির তাঁত পল্লীর লোকেরা। তাঁত পল্লীর অনেকে মালিকরা বিভিন্ন দেশের গ্রাফ ডিজাইন এনেছে।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বিভিন্ন তাঁত পল্লী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে মেরুন, সাদা, কালো, সবুজ, অ্যাশ, ফিরোজা, হলুদ, কমলা ম্যাজেন্টা, সবুজ, নীল, বেগুনী, ডিপ পেস্টসহ আরো কিছু রং। ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্ট, মিক্স মিডিয়া, স্ক্রিন প্রিন্টের তৈরি করা হচ্ছে রং এর শাড়ি গুলো।
এবার ঈদের তাঁত পল্লীর মালিকদের নিকট থেকে জানা যায়, বিভিন্ন রং এর পোশাক তৈরি করে পাল্লা দিব সবার সাথে। কে হারবে আর কে জিতবে জানি না। তবে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তাঁতের শাড়ি ও রং এর শাড়ি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মার্কেট ঢাকার গাউছিয়া, বাবুর হাট, নরসিংদীতে, কুমিল্লা, পাথরকাটা, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুসং দুর্গাপুর, কিশোরগঞ্জ, তারাইল, ঈশ্বরগঞ্জ, তেরিবাজার সহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে স্থান করে নিয়েছি।
এছাড়া ঈদ মানেই তাঁতীদের ভাগ্য বদলের মৌসুম। অনেকটা ঈদনির্ভর এ ব্যবসাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিবার তাঁতীরা ভাল ব্যবসা করলেও বেলকুচিতে এবার বিপরীত চিত্র। পাইকারি হাটে কাপড় কেনা-বেচায় তেমন চাঙ্গাভাব নেই। তাঁতীদের নিকট থেকে জানা যায়, ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিসের অবৈধ অনুপ্রবেশে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। আধুনিক ডিজাইনের শাড়ি যারা তৈরি করছেন তারা ভাল ব্যবসা করছেন। তাদের তৈরি শাড়ি বাংলাদেশের বিভিন্ন শপিংমলে, রাজধানী সহ সাড়া দেশব্যাপী হাটে বাজারে যাচ্ছে।
অপর দিকে প্রান্তিক তাঁতীদের নিকট থেকে জানা যায়, তারা কাপড় হাটে বিক্রি করার চাইতে মোকামে বিক্রি করছে ভাল। গত কয়েক বৎসর ঈদ মৌসুমী যতটুকু বেচা কেনা করেছি তার চাইতে এবার বেচা কেনা ভাল। মোকামে একদিন আগে গেলেই রাতেই কাপড় বিক্রি করে পরের দিন সকাল ৬টার ভিতর বাড়িতে ফিরতে পারছে। বর্তমান দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারনে পাইকাররা এবার হাটে কম আসছে। সেই কারনেই আমরা এবার নিজেরাই ময়মনসিংহ জেলা, নেত্রকোনা জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় নগদ টাকায় কাপড় বিক্রি করে ভালভাবেই বাড়িতে ফিরতে পারছি।
উপজেলার মুকুন্দগাঁতী গ্রামের আশরাফ আলী প্রামানিক, ইয়াকুব মোল্লা, মানিক, চন্দনগাঁতী গ্রামের মাওঃ আব্দুল কুদ্দুস, গৌতম সাহা, উত্তম সাহা, দুলাল সাহা (পপি), আজগড়া গ্রামের হাজী ফজল, তামাই গ্রামের হাজী মতিয়ার রহমান জানান, ২৫/৩০ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও এমন মন্দা ব্যবসা আগে কখনো আসেনি। প্রতিবার ঈদ আসলে আমাদের অনেকেরই হাটে কাপড় বিক্রি করতে নিয়ে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই দূর-দূরান্তের ব্যাপারীরা এসে কাপড় নিয়ে যায়। আর এবার হাটে নিয়েও কাপড় বিক্রি করতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে আর কয়েকদিন পর থেকেই পাইকারী কাপড় ক্রয় করার জন্য নরসিংদী, বাবুর হাট, টাংগাইলের বেশ কিছু পাইকার আসবে। এই আশা ভরসা নিয়েই নানা রংয়ের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তার মধ্যে আরও আমরা শাড়ি উৎপাদন করতে পারছি না তেমন। কারণ গত রবিবার, সোমবার যেভাবে বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং দিচ্ছে তাতে মনে হয় এবার ঈদে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে পড়বে। নতুনত্ব ডিজাইনকৃত শাড়ী গুলো এবার বাংলাদেশের মডেলিং এ স্থান পাবে বলে আশা করছি।
সোহাগপুর পাইকারি কাপড়ের হাটে গিয়ে দেখা যায়, তাঁতীরা তাদের উৎপাদিত রং এর শাড়ি নিয়ে বসে থাকলেও বিক্রি কম। ব্যাপারীরা দাম বলছে কম। অনেকেই কাপড় বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। হাটে কাপড় বিক্রি করতে আসা তাঁতীরা জানান, ঈদে এমন মন্দা ব্যবসা আগে কখনো হয়নি। উৎপাদিত কাপড় বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিকদের নতুন কাপড় তৈরি করতে দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে এই ঈদে যারা নতুন নতুন ডিজাইনের সুতি শাড়ি তৈরি করেছে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ব্যবসা করছে। এবারের ঈদে বিশেষ করে কয়েকটি শাড়ি তৈরি হয়েছে বেলকুচিতে। শাড়ির গুলোর মধ্যে রয়েছে হাফসিল্ক কাটিং, জামদানী, রেশম কাটিং, সুতি কাটিং, জলছাপ, বালুজুড়ি ও মাধবী শাড়ি। এসব শাড়ি বাংলাদেশের কয়েকটি বড় মার্কেটে স্থান পেয়েছে। উপরোক্ত শাড়ী গুলো তৈরি করার জন্য প্রথমে কম্পিউটার থেকে ডিজাইন বের করে, তার পর স্ক্রীন তৈরি করে কাপড়ে ছাপ মারছে তাঁতীরা।
বেলকুচি উপজেলার সবচাইতে পুরাতন ব্যবসায়ী মুকুন্দগাঁতী বাজারে অবস্থিত বেলকুচি আর্টের স্বত্বাধিকারী আব্দুল ওয়াহাব এর পুত্র আবুল বাশার জানান, এবার নতুন বেশ কিছু রং এর শাড়ি তৈরি করার জন্য নতুন নতুন ডিজাইন করছে উপরোক্ত তাঁত মালিকরা। তাদের শাড়ি এবার ঈদের ভাল মার্কেট পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কত বছরের চাইতে এবার আমাদের তেমন ভীড় নেই। ব্যবসাও চলছে অনেকটা মন্দা। তবু তাঁতিরা হাল ছাড়েনি। দেশীয় শাড়ী তৈরি করে তাঁত মালিকরা আশা করছে আন্তর্জাতিক ভাবে এ শাড়ী স্থান করে নিবে বাঙালী বধূদের কাছে।
0 comments:
Post a Comment