সিরাজগঞ্জ স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবিতে সিরাজগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, অলিগলি এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার। এগুলোতে জেলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগ ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টারে রিয়াজের ছবি বড় করে ছাপানো হলেও উপরে ডান কিনারে ছোট আকারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও জয়ের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। সরকারদলীয় সংগঠনের নাম ব্যবহার করে প্রকাশ্যে দিবালোকে এসব পোস্টার, ব্যানার বা বিলবোর্ড সাঁটানো হলেও কারা সাঁটাচ্ছে সে বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কেউই অবগত নন।
২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের ২৯/১ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই ফ্ল্যাট থেকে দেড় মণের বেশি স্বর্ণের বার ও তিন কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের সৌদি রিয়াল উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় অন্য আসামিরা উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজের সম্পৃক্ততার কথা বললে মামলায় তাকেও অভিযুক্ত করা হয়। এরপর রিয়াজ আত্মগোপনে চলে যান।
গত বছরের ১১ জুলাই সমকালের প্রথম পাতায় 'আসামি প্রকাশ্যে, খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৬নং রোডের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এর আগে মোহাম্মদ আলী ও সোনা মজিদ নামে আরও দু'জনকে ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়। পল্টন থেকে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতারের পরপরই তিনি গণমাধ্যমকে জানান, জব্দ করা স্বর্ণের মালিক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ। এছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরে জব্দ করা স্বর্ণের বড় বড় চালানেও তার সংশ্লিষ্ট পাওয়া গেছে। রিয়াজকে গ্রেফতারের পরপরই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.মইনুল খান সমকালকে এ তথ্য দিয়েছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে দলীয় ব্যানারে সিরাজগঞ্জ শহরের মোড়ে মোড়ে টানানো ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন বলেন, এসব পোস্টারের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। জেলা যুবলীগ সভাপতি মইনুদ্দিন খান চীনু বলেন, এসব পোস্টারের
বিষয়ে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টি নজরে আসায় নেতাকর্মীকে এসব পোস্টার ও বিলবোর্ডে যুবলীগের নাম ব্যবহার না করার জন্য কড়াভাবে নিষেধ করা হয়েছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেহাদ আল ইসলাম বলেন, সংগঠনের নাম ব্যবহারের ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান দুদু বলেন, আমরাই সরকারের অঙ্গ, তাই আমরা মিথ্যা মামলা বলতে পারি না। আমরা বা জেলা আওয়ামী লীগ এসবের সঙ্গে নেই। কে বা কারা এসব পোস্টার লাগাচ্ছে, তার কিছুই জানি না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারি তালুকদার বলেন, এ ধরনের বিলবোর্ড বা পোস্টার লাগানোর বিষয়ে কার্যকরী কমিটিতে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যারা লাগাচ্ছে তারা মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই লাগাচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, এসব পোস্টার বা বিলবোর্ডের বিষয়ে দলীয় অনুমোদন নেওয়া হয়নি বা সাংগঠনিকভাবে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। যদি কেউ দোষ করে থাকে, তাহলে তার শাস্তি হবে, আর অপরাধী না হলে ছাড়া পাবে। যে কেউই বিপদে পড়লে আশপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহমর্মিতা দেখাতে পারেন। রিয়াজের ভক্ত বা সমর্থকরা হয়তো এসব সাঁটাতে পারে।
0 comments:
Post a Comment