কানাডা এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে জনতার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো রাস্তায় জনতার ঢল নামে। হর্ষধ্বনি, নানা রকম স্লোগান, নেচে-গেয়ে, ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায় তারা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবনে পৌঁছালেও তাঁকে বরণ করা হয় গানে গানে।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে গণভবনের (মূল ভবন) গেটে আসেন প্রধানমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নামলেই তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নন্দিত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম।
এ সময় বন্যা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে গেয়ে ওঠেন, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি/তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী! ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে! তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে’।
বন্যার গানে গলা মেলালে সুর ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত অন্যদের কন্ঠেও।
এরপর প্রধানমন্ত্রী গণভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।
গণভবন লবি ফেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী সোজা চলে ভেতরে আগে থেকে অপেক্ষমান বিশিষ্টজনদের কাছে যান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীকে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিকসহ বিশিষ্ট জনরা শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান, তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
বিশিষ্টজনরা প্রধানমন্ত্রীর সফল সফর ও পুরস্কার প্রাপ্তির প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গল কামনা করেন।
দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা ও বহুমাত্রিক অবদান, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য জাতিসংঘ পদক ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত হওয়ায় তার প্রশংসা করেন।
সফরকালীন কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরই মধ্যে দেখা গেল মমতাময়ী এক নারীকে। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন নাতি-নাতনি এসে হাজির। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নাতনীরা তাকে দাদী-দাদী বলে জড়িয়ে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরম মমতায় তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেন। কোলে তুলে আদর করেন।
এ সময় বিশিষ্টজনদের আরও উপস্থিত ছিলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ, শামীম আরা নীপা, এফবিসিআই এর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম প্রমুখ।
গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, এসএম কামাল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লিয়াকত শিকদার, বদিউজ্জামান সোহাগসহ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পুরস্কার বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য হয়ে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে টানা ১৭দিনের সফর শেষে দেশে ফেরেন শুক্রবার বিকেলে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছেড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুবাই হয়ে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ৬টা ৪২ মিনিটে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৬টা ৫০ মিনিটের পরে তিনি বিমান থেকে নামলে সেখানে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও মেয়র, সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
বিমানবন্দরে এ সময় মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিত ছিলেন সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররাফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ওবায়দুল কাদের, হোসেন তৌফিক ইমাম, মাহাবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, ফারুক খান, আসাদুজ্জামান নূর, আবদুর রাজ্জাক, সাহারা খাতুন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এ বি তাজুল ইসলাম, এ কে এম রহমতউল্লাহ, কামরুল ইসলাম, আবদুস শহীদ, আবদুর রহমান, আব্দুল মান্নান, মুজিবুল হক, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তারানা হালিম, মেহের আফরোজ চুমকি, ইসমত আরা সাদেক, হাবিবুর রহমান খান সিরাজ, নাহিম রাজ্জাক, মেয়র আনিসুল হক, সাইদ খোকন প্রমুখ।
বিমানবন্দর থেকে গণভবন যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু স্লোগানের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে, ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান হাজার হাজার নেতা-কর্মী। গাড়িতে বসে প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতার অভিনন্দনের জবাব দেন। ধীরে ধীরে তিনি আধ ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে গণভবনে পৌঁছান।
বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, কাকলি, বনানী, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বিজয় সরণি থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো সড়কেই ছিলো জনতার ঢল। প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা গত কয়েকদিন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলো আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
বেলা দুইটার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সাভার, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে শত শত বাস-ট্রাকে করে নেতা-কর্মীরা আসতে থাকে। ব্যানার, ফেস্টুন, স্লোগান, নাচ-গান, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেন নেতা-কর্মীরা।
0 comments:
Post a Comment