সুজিত সরকারঃ
সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত এনায়েতপুর থানার দরিদ্র তাঁত শ্রমিক রইস উদ্দিন(রইস পাগলা) আবারও এলাকাবাসীর আলোচনার খোরাক হয়েছেন। এর আগে তিনি হালের গরু বিক্রি এবং বেসরকারী সংস্থা থেকে নিজ নামে ঋন নিয়ে জনস্বার্থে সাকো নির্মান করে এলাকাবাসীর সমলোচনায় এসেছিলেন। এবারে তিনি তার শ্রম বিক্রর টাকা জমিয়ে কিনেছেন আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একখানা তাঁতের শাড়ি আর সাধারন সম্পাদকের জন্য একখানা লুঙ্গী। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রইস উদ্দিন জানালেন দাম যতই হোক না কেন ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার এই উপহার তিনি তার নিজ হাতে দলের এই শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে তুলে দিতে চান।
এনায়েতপুর থানার গোফরেখী গ্রামের তাঁত শ্রমিক রইস উদ্দিনের ব্যতিক্রমী উদ্দোগ্যের মধ্যদিয়ে সামাজিক উন্নয়নে সম্পক্ত থাকায় এলাকাজুড়ে তার পরিচিতি রয়েছে বেশ। তিনি মাটি কাটা শ্রমিক ও বাবুর্চির কাজও করে থাকেন। তবে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রইজ উদ্দিন দলের যেকোন কাজের জন্যই নিবেদিত। এলাকার রাস্তা-ঘাটে সংস্কার কাজ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিনে পয়সায় করে থাকেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এলাকার দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নিজের চায়ের দোকান বিক্রি করে প্রচারনা চালিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে তার গ্রামের পাশে বয়ে চলা হুরাসাগর খালের উপর মানুষের যাতায়াতের জন্য নিজের হালের গরু আর স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে ৯২ হাত বাঁশ কাঠের দৃষ্টিনন্দন সাঁকো করে দিয়ে জেলা সহ দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচিত হন। তার এই উদ্দোগের প্রতি সন্মান জানিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সেখানে ৩২ লাখ টাকায় একটি সেতু তৈরীর কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে রইজ উদ্দিন তার কাজের পাশাপাশি বিনে পয়সায়, কবর খোড়া, অসহায় মেয়ের বিয়েতে সহযোগীতা, দরিদ্রদের বাড়িতে আচার অনুষ্ঠানে রান্না সহ সামাজিক সকল কাজে সহায়তা করে থাকেন। এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে এলাকার সুধী সমাজ নানা অনুষ্ঠানে সম্মান জানিয়ে রইজ উদ্দিনকে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি করে থাকেন। গত মাস খানেক আগে তার রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের জাতীয় সম্মেলনের হবার কথা সুনে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বর্তমান সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পুনরায় সভাপতি হচ্ছেন। আর সাধারন সম্পাদক যেই হোক না কেন তাদের দুজনকেই এলাকার তৈরি পছন্দের মুল্যবান শাড়ী-লুঙ্গী উপহার দেবেন। তখন থেকে কিছু কিছু টাকা জমাতে থাকেন। সম্মেলনের দিন পর্যন্ত তা হয়ে যায় ৪ হাজার টাকায়। কাউকে না জানিয়ে মঙ্গলবার সকালে খামারগ্রামের আনোয়ার হোসেন খানের বাড়ি গিয়ে পাইকারী দরে ৮শ টাকায় কিনে আনেন লুঙ্গী। এরপর এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত শাড়ি প্রস্তুতকারী একই গ্রামের আফজাল হোসেন লাভলুর বাড়িতে যান শাড়ি কিনতে। আধুনিক নকশার বুননে সবচেয়ে ভাল মানের একটি শাড়ী পছন্দ করে বসেন রইজ উদ্দিন। তাঁত মালিক আফজাল হোসেন লাভলু এতো দামের শাড়ি দিয়ে কি করবেন এমন প্রশ্ন করলে, প্রথমে জানাতে চাননি তিনি। পরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বলে তাকে উপহার দেবার জন্য শাড়িটি কিনতে এসেছেন। নেত্রীর প্রতি তার ভালবাসা, সম্মান জানিয়ে ২ হাজার টাকা না নিয়ে ৩ হাজার টাকায় শাড়িটি তুলে দেন কারখানার মালিক। এ ব্যাপারে জাতীয় কারুশিল্পী পুরস্কার প্রাপ্ত তাঁত মালিক আফজাল হোসেন লাভলু জানান, এমন বিরল ভালবাসার বিষয়টি রইজ উদ্দিনের কাছে শুনে আসলেই অবাক হয়েছি। আমি শাড়ির দাম নিতে চাইনি। বিনামুল্যে দিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তিনি নেননি। বরং বলেছেন, আমার কষ্টে জমানো টাকায় যদি শাড়িটি শেখ হাসিনাকে কিনে না দিতে পারি তাহলে আমি আত্মতৃপ্তি পাবনা।
রইজ উদ্দিনের ইচ্ছে ছিল জাতীয় সম্মেলনে গিয়ে সেখ হাসিনাকে কাছে থেকে দেখবার। কিন্তু সে সৌভাগ্য হয়নি। তিনি জানান অনেক কষ্টে শাড়ি ও লুঙ্গীটি কিনেছি শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে দেবার জন্য। আশা করি আমার হাত থেকে তারা ক্ষুদ্র এ শুভেচ্ছা উপহার গ্রহন করবেন।
0 comments:
Post a Comment