সিরাজগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছেন এমন আরও তিনশ জনকে খুঁজছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার জেলা থেকে ১৯ জন পুলিশ কনস্টেবলকে ভুয়া সনদ ব্যবহারের দায়ে আটক করেছে সংস্থাটি।
সিরাজগঞ্জ-পাবনা আঞ্চলিক দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার পুলিশ বাহিনী ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন দফতরে অমুক্তিযোদ্ধা বাবার ভুয়া ও জাল সনদ দিয়ে প্রতরণার মাধ্যমে চাকরি নিয়েছেন তারা। দুদক এ বিষয়ে জোরেসোড়ে তদন্ত শুরু করেছে। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১২ সালে পুলিশ বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় সিরাজগঞ্জসহ সারা দেশে দু’ দফায় ৩ হাজার ২৮৫ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার ১৯ জনসহ মোট ৪৩ জন অমুক্তিযোদ্ধার বাবার ভুয়া ও জাল সনদ দিয়ে প্রতরণার মাধ্যমে চাকরি নেয়।
সিরাজগঞ্জের ১৯ প্রতারক পুলিশ কনস্টেবলের গ্রেফতারের আগে মামলার নথিপত্র, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর থেকে পোষ্য কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষানবিশ কনস্টেবলদের বাবাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই প্রতিবেদন পাওয়ার পর দুদক তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হয়। এছাড়াও বাগেরহাট, জামালপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, জয়পুরহাট,পাবনা, সুনামগঞ্জ, গাইবন্ধা, চাঁদপুর ও টাঙ্গাইল জেলার ২৪ যুবক ভুয়া ও জাল সনদ দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি নিয়েছে বলেও সূত্রটি জানায়।
সিরাজগঞ্জ-পাবনা আঞ্চলিক দুদক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৯ জন বাদেও আরো কমপক্ষে ৩ শতাধিক অমুক্তিযোদ্ধার পোষ্য ভুয়া ও জাল সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এ সময় তাদের গ্রেফতার করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইউসুফ আলী বলেন, সিরাজগঞ্জ বাদেও আরও বেশ ক’টি জেলায় ভুয়া ও জাল সনদ দিয়ে কয়েকজনকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
প্রায় আড়াই বছর আগে এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় মামলা করা হয়। মামলায় পুলিশি তদন্তে ভুয়া ও জাল সনদ প্রদানকারী হিসেবে বেলকুচির উপজেলা কমান্ডার সোনালী ব্যাংকের সাবেক সিবিএ নেতা শহিদুর রেজা সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে দুদক কর্মকর্তাদের কাছে উপকারভোগী ও ভুক্তভোগী পুলিশ কনস্টেবল সদস্যদের স্বজনরা কমান্ডার রেজার নাম উল্লেখ করেন। তারপরও দুদকের তদন্তে কেন তাকে সন্দেহভাজন আসামি করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে দু’দক আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিকী আরও বলেন, গণমাধ্যমে শহিদুর রেজার সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হলে তাকে গ্রেফতারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া যাবে।
বেলকুচি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার নজরুল ইসলাম বলেন, রেজাকে কেন দুদক ধরছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সম্প্রতি ১৯ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর রেজা পলাতক রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে রেজা ঢাকায় তার ছেলে ডা. মাহমুদুল হক শুভর বাসায় রয়েছেন।
0 comments:
Post a Comment