Tuesday, October 10, 2017

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার দু’টি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন

সিরাজগঞ্জঃ এক সপ্তাহ ধরে যমুনার অব্যাহত ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার দু’টি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়াও দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তাঁত কারখানাসহ বিলীন হয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি।

এদিকে ভাঙন রোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আতঙ্কে রয়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর-কৈজুরী সড়ক, এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন স্থাপনা।

অপরদিকে হাজার হাজার তাঁত কারখানাও নদী গর্ভে বিলিন
হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে তাঁতীরা।

যমুনার ভাঙনে এনায়েতপুরে তিনশ’ বাড়িঘর বিলীনসোমবার (৯ অক্টোবর) এনায়েতপুর থানার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি, জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ভাঙন কবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসের বন্যায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যমুনার পূর্বপাড়ে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। ওই সময় শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পশ্চিমপাড়ের এ অঞ্চলে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উল্লেখিত ৬টি গ্রামের অন্তত তিনশ’ ঘর-বাড়ি ও কয়েকশ’ একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও হাট বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরের বেশ
কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নদী ভাঙনে বসতবাড়ি হারানো ব্রাহ্মণগ্রামের দিনমুজুর মোফাজ্জল হোসেন ও আনোয়ারা খাতুন জানান, গত রাতে যমুনার ভাঙনে দেখতে দেখতেই বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেলো। এখন আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। পরিবার নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো ভাবতে পারছি না।

গোপিনাথপুরের সাইদুল ইসলাম রাজ ও ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা আকতার সরকার বলেন, আমরা অসহায় অবস্থায় রয়েছি। আমাদের দিকে কেউ ফিরে দেখছে না।

ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নেয়া হচ্ছেস্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সরকার অভিযোগ করে বলেন, ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় নদী ভাঙন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অনেকেই বৃদ্ধ ও শিশু সন্তান নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদিন ধরে যমুনার পশ্চিম পাড়ে অন্তত ৬টি গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে
বলে তিনি জানান।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেহেলী লায়লা বাংলানিউজকে জানান, খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙনের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। খুব শিগগিরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার বিকেলে ভাঙনস্থল পরিদর্শন ও জরিপ করা হয়েছে।

একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ভাঙনরোধে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন জানান, নদী ভাঙনের ব্যাপকতার বিষয়ে অবগত হয়েছি। ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে বলা হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment