সাম্প্রতিক বন্যায় সিরাজগঞ্জে শস্য বীমার আওতায় ৪০০ দাবি উত্থাপন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বীমা প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনে (এসবিসি) এসব দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষককে বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বীমা প্রতিষ্ঠান।
এসবিসি সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার ৬টি অঞ্চল- রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, কামারখন্দ ও কাজিপুরে এবার শস্য বীমার ৪০০ পলিসি ইস্যু হয়। এসব পলিসির জন্য প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে বিঘা প্রতি ৫শ' টাকা। সম্প্রতি উজানে ভারি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় এসব এলাকার ধানক্ষেত পানিতে তালিয়ে গেছে। একারণে সবগুলো পলিসির দাবি উত্থাপন হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে এবারই সর্বোচ্চ বীমা দাবি উত্থাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের সিরাজগঞ্জ শাখার এসিসট্যান্ট ম্যানেজার মো. জহুরুল ইসলাম। ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে তিনি জানান, এরআগেও দাবি উত্থাপিত হয়েছে তবে এতো নয়। শস্য বীমার আওতায় এসব জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষকরা।
জহুরুল ইসলাম জানান, বন্যাপ্রবণ এই অঞ্চলের কৃষকদের ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সাধারণ বীমা করপোরেশন আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা প্রকল্পের আওতায় বন্যার বীমা কভারেজ চালু করেছে। এক্ষেত্রে প্রিমিয়াম নেয়া হয় বিঘা প্রতি ৫শ' টাকা। আর ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে রাজশাহী শাখা সাধারণ বীমা করপোরেশনের ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে এসবের বীমা দাবি এখনো উত্থাপন হয়নি। ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়ার পরই বীমা দাবি উত্থাপন হবে। তবে এবারের বৃষ্টি ও বন্যায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শস্যের ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে মোহাম্মদ আলী জানান, এরআগে আমন ধানের জন্য রাজশাহী জেলায় সর্বমোট ৪৭৩টি পলিসি ইস্যু হয়েছিল। এরমধ্যে ৩৩০টি পলিসির দাবি উত্থাপিত হয় এবং ১৪৩টি পলিসির দাবি উত্থাপন হয়নি। প্রতিটি বীমার দাবির জন্য বিঘা প্রতি কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে ৬শ' টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।
এজন্য কৃষকের কাছ থেকে বিঘা প্রতি প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে ২৫০ টাকার মতো। তবে বিঘা প্রতি প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছিল ভ্যাটসহ ৫৭৫ টাকা। প্রতিটি বীমা পলিসির জন্য সরাক সরকার ভর্তুকি বাদ দিয়ে কৃষককে পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫০ টাকার মতো।
সকল কৃষকের জন্য শস্য বীমা অত্যন্ত জরুরি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো এই বীমা বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মন্তব্য করেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের রাজশাহী শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ সেবা বিভাগ (ডিএলএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় এ বছর ৫ হাজার ৫৯০ একর ফসলি জমি ডুবেছে। এতে ২ হাজার ৫১৩ টন খাদ্যশস্যের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে চলমান বন্যায় দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ৬ লাখ ১৮ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
0 comments:
Post a Comment