প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে তাদের আপনজনরাই। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যা করে নাই, ঘরের আপনজন হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা মানুষরাই জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর এত কাছ থেকে স্নেহ ভালোবাসা পেয়ে কিভাবে সবাই বেঈমানি করলো?’ রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভায় দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভাষ্য, ‘১৫ আগস্ট একটি পরিবারকেই শুধু নয়; বাঙালি জাতির বিজয়, আদর্শ ও চেতনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড যারা ঘটালো তারা প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত করতো। খুনি ডালিমের স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালিকা নিয়মিতই আমাদের বাসায় যেতো। খুনি নূর ও আমার ভাই শেখ কামাল ছিল জেনারেল ওসমানীর এডিসি। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় একইসঙ্গে কাজ করেছে। মোশতাকের আত্মীয় খুনি রশিদ খন্দকার। মোশতাক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনিও বেঈমানি করেছেন। জিয়াউর রহমানের মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পায় বঙ্গবন্ধুর হাতে। সেই সময় জিয়ার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর (খালেদা জিয়া) সমস্যা চলছিল। তা সমাধান করেছেন বঙ্গবন্ধু। তারা মাসে দুই-তিনবার আমাদের বাসায় আসতো। সবার সঙ্গে গল্প করতো। খুনি কর্নেল ফারুক বঙ্গবন্ধুর সরকারের অর্থমন্ত্রী মল্লিক সাহেবের শ্যালিকার ছেলে। সংবিধান লঙ্ঘন করে খন্দকার মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলো। পদন্নোতি দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করলো। এতেই প্রমাণ হয় জিয়া জড়িত। তাতে কোনও সন্দেহ থাকে না।’
জিয়াউর রহমানকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘কেউ কেউ নামে মুক্তিযু্দ্ধ করেছে, কিন্তু তাদের হৃদয়ে ঠিকই ছিল পাকিস্তান। তারাই এদেশের সর্বনাশ ডেকে আনে। বাংলাদেশের বিজয় যারা সহ্য করতে পারে নাই, তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যেন কারবালার ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে গেলো। ১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনে কালো অধ্যায়। কালো দিবস যদি না আসতো ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বিশ্বে দৃষ্টান্ত হতো।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন, কিন্তু কিছুই নিয়ে যাননি। তিনি বলেছিলেন— ‘আমার রক্ত দিয়ে এ মাটির ঋণ শোধ করবো।’ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর লাশ টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। মানুষজনকে জানাজা পড়তে আসতে দেওয়া হয়নি। ৫৭০ সাবান দিয়ে তাকে গোসল করানো হয়েছিল। সেখানে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে ত্রাণের কাপড় দিয়ে দাফন হয়েছিল তাঁর। তিনি শুধু দিয়েই গেছেন, নিয়ে গেছেন শুধু ত্রাণের কাপড়।’
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খান, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার শামসুল হক রেজা প্রমুখ।
0 comments:
Post a Comment