Saturday, November 5, 2016

সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের হালচাল চিকিৎসক-স্টাফদের দুর্ব্যবহার, অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলায় সেবা পাচ্ছে না রোগী

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক ও স্টাফের দুর্ব্যবহার, অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলাসহ নানা কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ও রোগীরা দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গেলে এ প্রতিবেদকের নিকট রোগী ও তাদের স্বজনরা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। সরেজমিনে গিয়েও তাদের এ অভিযোগগুলোর বাস্তবতা চোখে পড়ে।
গত ১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলায় প্রভাবশালীদের হাতে নির্যাতিত শিশু রফিকুল ইসলাম আপেল(১২)কে তাড়াশ উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে নির্যাতিত শিশুর বাবাসহ তার কয়েকজন আত্মীয় জরুরী বিভাগের যান। দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফয়সাল আহমেদ তখন দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি রোগীর অবিভাবকদের ভর্তি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দেন। পরে আপেলের অভিভাবকরা স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের জানালে কয়েকজন সংবাদকর্মী হাসপাতালে গিয়ে কি কারণে তাকে ভর্তি করা যাবেনা তা জানতে চান। এ সময় ডিউটি পরিবর্তন হওয়ায় জরুরী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. নূরুল ইসলাম। তিনি এ প্রশ্নের কোন সদত্তোর দিতে না পেরে উল্টো রোগীর স্বজনদের উপর ক্ষিপ্ত হন। পরে ডা. ফয়সাল আহমেদ সংবাদ পেয়ে জরুরী বিভাগে এসে রোগীকে ভর্তির সুপারিশ করেন। আগে কেন ভর্তি করলেন না জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। এ সময় উপস্থিত অনেকেই অভিযোগ করেন, ডা. নূরুল ইসলাম প্রায়ই চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যান।
নির্যাতিত শিশু আপেলের সাথে আসা স্বজনদের অভিযোগ, ডা. নূরুল ইসলামের বাড়ি ও নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের বাড়ি একই এলাকায় এবং তাদের সাথে বিশেষ সখ্যতা থাকায় তিনি তার ছেলেকে ভর্তির ক্ষেত্রে গড়িমসি করেন।
পরে নির্যাতিত শিশু আপেলকে নিয়ে সংবাদকর্মীরা অর্থপেডিক বিভাগে ভর্তি করাতে গেলে দুপুর দেড়টা থেকে পৌনে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও দায়িত্বরত কোন চিকিৎক বা নার্সের দেখা পাওয়া যায়নি। এসময় কয়েকজন রোগী অর্থপেডিক বিভাগে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে শহরের ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ফেরত চলে যান।
এদিকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া রোগী সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের আব্দুস সালামের মামা(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অর্থপেডিক বিভাগের কাউকে পাইনি। বাধ্য হয়ে রোগীকে নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি করাতে যাচ্ছি। অপর রোগী জেলার বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সেরাজুল ইসলামের বড় ভাই রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, তিনি তার ভাইকে নিয়ে দুপুর পৌনে দুইটা থেকে পৌনে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও এ বিভাগের কারও দেখা পাননি।
অপরদিকে, মেডিকেল সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতালের চিকিৎসক ও জরুরী বিভাগের ব্রাদারদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগীর অবিভাবক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, সাধারণ একটি সার্টিফিকেট দিতে জরুরী বিভাগের ব্রাদার শঙ্কর কুমার ১২শ’ টাকা ঘুষ দাবি করছেন। রোগীর ওই অবিভাবক নিতান্তই গরীব বিধায় ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে তার সাথে দুর্ব্যবহার করে রুম থেকে বেড় করে দেন ওই ব্রাদার। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে হাসপাতালে হাজির হলে রোগীর অবিভাবককে সংবাদ কর্মীদের সামনে টাকা ছাড়া সার্টিফিকেট মিলবে না বলে দেন। এ সময় এ প্রতিবেদক ঘুষ চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই ব্রাদার ডা. ফয়সাল আহমেদ ঘুষ চেয়েছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক ডা. ফয়সাল আহমেদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, অফিসিয়ালী কোন টাকা নেয়া হয়না। তবে, আমাদের সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ মামলা করলে ৪/৫বছর কোর্টে দৌড়া-দৌড়ি করতে হয়। এ জন্য আনঅফিসিয়ালী কিছু টাকা নেয়া হয়। কেউ না দিলে সে ক্ষেত্রে কোন আপত্তি করা হয়না।
অফিসিয়াল টাইমে অর্থপেডিক বিভাগে কাওকে না পেয়ে রোগী ফিরে যাওয়ার বিষয়ে কথা হয় হাসপাতালের সেবা উপ-তত্বাবধায়ক রওশন আরা’র সাথে। তার কাছে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, সবাই মাসিক সভায় যোগ দেয়ার কারণে অর্থপেডিক বিভাগে কেউ ছিলেন না। তবে কাউকে না পেয়ে রোগী ফেরত যাওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে সংবাদকর্মীরা তাৎক্ষনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আকরামুজ্জামানের সাথে মুঠো ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগগুলো গুরুতর। তবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

0 comments:

Post a Comment