Monday, September 19, 2016

সিরাজগঞ্জে হার্ড পয়েন্টকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী

সিরাজগঞ্জের মানুষের কোন বিনোদনের জায়গা নেই । উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু ও যমুনা নদীর তীর ঘেষে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘ দেড় যুগেও গড়ে ওঠেনি পর্যটন শিল্প। কুয়াকাটার পর এবার সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। প্রকৃতির এমন দৃশ্য দেখতে এখন হাজার হাজার মানুষ ভীড় করছে হার্ড পয়েন্টে। বিশেষ করে ঈদকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট এখন হাজার হাজার মানুষের ভীরে মুখরিত। সচেতন সিরাজগঞ্জবাসী বলছেন সারা দেশের সাথে সিরাজগঞ্জের রেলপথ ও সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথ সৃষ্টি করে পর্যটন এলাকা গড়ে তুললে একদিকে যেমন জেলার গুরুত্ব আরও বাড়বে তেমনি অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। তবে সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জেলায় পর্যটন কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনা করে যমুনার কোল ঘেষে সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে প্রক্রিয়া চলছে। এবং সিরাজগঞ্জে খুব তাড়াতাড়ি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সুত্রে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরকে যমুনা নদীর কড়াল গ্রাস ও ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় শহরের কোল ঘেষে নির্মাণ করা হয় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধটি নিমার্ণে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া বাঁধটি ২০০১ সালে শেষ হয়। বাঁধটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে মানুষের বিনোদনের দ্বার উন্মোচিত হয়। বাঁধের হার্ড পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য বিনোদন পিপাসুদের বেশী আকৃষ্ট করে। এছাড়াও বন্যার সময় চারিদিকে শুধু পানি আর পানি, পানির উপর দিয়ে বয়ে আসা নির্মল বাতাস এবং শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা বড় বড় চর এবং চরের চিক্ চিক্ বালি মানুষের বিনোদনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। নদীর বুকে ছুটে চলা নৌকা, যমুনা নদীর সুবিস্তৃত জলরাশিঁ দেখে চোখ মন জুড়িয়ে নিচ্ছেন ভ্রমন পিপাসু মানুষ । কেও কেও ভাড়া নৌকায় নদীর বুকে জেগে উঠা চরে ভ্রমন করছেন । বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবে তরুন-তরুনী থেকে শিশু-কিশোর এমনকি প্রবীণরাও এখানে মেতে উঠছেন আনন্দে । ফলে জায়গাটি প্রথম দিকে শুধু সিরাজগঞ্জ বাসীর নজর কারলেও পরবর্তীতে দেশ-বিদেশের মানুষও চিত্ত বিনোদনের জায়গা হিসেবে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধকে বেছে নেয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেনী পেশার মানুষ এখন সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব ও দিবসেও বিনোদনের স্থান হিসেবে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ বেছে নিয়েছেন। যার কারনে দেশ-বিদেশের হাজারও মানুষের আগমনে যমুনা নদীরতীর হার্ড পয়েন্ট সব সময় থাকছে সরগরম। শত শত মানুষের আগমন ঘটায় এখানে বিভিন্ন ধরনের দোকান সাজিয়ে বসেছেন এলাকাবাসী ।এতে করে তাদেরও আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে ।আর বিভিন্ন মানুষের আগমন ঘটায় স্থানীয় এলাকাবাসীও এ জন্য গর্ববোধ করে থাকেন। যার কারনে দীর্ঘদিন থেকে সিরাজগঞ্জ বাসী বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গাইড বাঁধ থেকে হার্ড পয়েন্ট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার দাবী জানিয়ে আসছেন। শুধু সাধারণ মানুষের কাছেই নয়, স্থানটি সরকারেরও নজরে আসায় এবং পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্ব বহন করায় সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাসেদ খান মেনন সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে সফরে এলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সিরাজগঞ্জ বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবীর কথা তুলে ধরলে মন্ত্রী দাবী পূরণের ঘোষণা দেন কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন উদ্যেগ গ্রহন করা হয়নি। চানাচুর ও আচার বিক্রেতা মোঃ আব্দুল আলীম বলেন, বাধেঁর পাশে বসবাস করি। প্রতিদিন এখানে বহুলোক আসে। তাদেও দেখে বুক ভরে যায়। তারা আসে বলেই আমারা বেচাবিক্রি করে সংসার চালাই। যমুনার তীরই আমাদের জীবন জীবীকার প্রধান উৎস। জেলার তাড়াশ থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে হার্ডপয়েন্ট এলাকায় বেড়াতে এসেছেন কলেজ শিক্ষক মুক্তার হোসেন তিনি বলেন, জেলার কোথাও বিনোদনের তেমন জায়গা নেই । হার্ডপয়েন্ট এলাকাটি সিরাজগঞ্জ বাসীর বেড়ানোর বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসি । পরিকল্পনা করে জায়গাটিকে বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবী জানান তিনি। সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য নব কুমার কর্মকার বলেন, জেলার মানুষের বিনোদনের কোন জায়গা নেই । তাই সিরাজগঞ্জের মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে হার্ডপয়েন্টকে বেছে নিয়েছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসছেন । এখানে প্রচুর জায়গা রয়েছে । রয়েছে দীর্ঘ যমুনা নদীর তীর । বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে এখানে । বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাসেদ খান মেনন সমপ্রতি সিরাজগঞ্জ সফরে এলে সিরাজগঞ্জ বাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে এই এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যমুনা নদীর তীরকে সরকারীভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে মানুষের বিনোদনের অভাব পুরণ হওয়ার পাশাপশি সরকার এ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সেতু স্থাপনের মধ্য দিয়ে জেলায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকাকারের পক্ষ থেকে কাজীপুরের মেঘাই থেকে সিরাজগঞ্জের হার্ডপয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা ইতিমধ্যেই পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলছে। যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি মনে করছেন।

0 comments:

Post a Comment