Thursday, January 28, 2016

এনায়েতপুর-চৌহালীতে অছাত্র ও বিবাহিতদের দিয়ে চলছে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কার্যক্রম

অনলাইন সংগ্রহঃ
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের এক যুগ পেড়িয়ে গেছে। দলীয় কার্যক্রম চলছে বিবাহিত ও অছাত্রদের দিয়ে। এতে সাধারন ছাত্ররা রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে। ফলে দু’টি দলের ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ডিমেতালে। সম্মেলনের মাধ্যমে মেধাবী ও তরুনদের হাতে ছাত্র রাজনীতির দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারন শিক্ষার্থীরা।
দলীয় একাধিক সুত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে এনায়েতপুর থানা ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে নাসিরুল ইসলাম সভাপতি ও আলমগীর হোসেন সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ২০০৯ সালে আলমগীর হোসেন ঢাকায় চাকুরি নেয়ায় তৎকালীন জেলা কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে মনিরুল ইসলাম মোন্নাফকে সাধারন সম্পাদক পদে মনোয়ন দেয়। ৫১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি দিয়ে ১০ বছর ধরে চলছে থানা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। সভাপতি ও সম্পাদক সহ অধিকাংশ নেতাকর্মী বিবাহিত ও অছাত্র। তাদের অনেকে বর্তমানে সন্তান, পরিবার-পরিজন, ব্যবসা-বানিজ্যসহ চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। যে কারনে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব তরুণ নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন, এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা রাশেদুল ইসলাম সিরাজ।
এদিকে রাজনৈতিক মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের এনায়েতপুরে সাংগঠনিক কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ২০০৪ সালের সম্মেলনে সাইফুল মিঠু সভাপতি ও সোহল রানাকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে মিঠু তার ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত ও সোহেল রানা সম্প্রতি আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম ২০১৩ সালে জামিল হোসেনকে আহ্বায়ক ও সাইদুল ইসলাম রাজকে সিনিয়র যুগ্নআহ্বায়ক করে এনায়েতপুর থানা ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করেন। এরপর পেড়িয়ে গেছে ৩ বছর। আহ্বায়ক ও যুগ্নআহ্বায়কের মধ্যে দলীয় কোন্দলের কারণে এখনো হয়নি পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এরা দুজনই বিবাহিত। অনেক আগেই ছাত্রত্বের পাঠ চুকিয়ে পরিবার ও ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। যে কারনে ছাত্রদলের প্রতি অনিহা দেখা দিয়েছে সাধারন ছাত্রদের। ছাত্রদলের উদ্যোগে সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচী এনায়েতপুরে পালিত হয় না। দলকে গোছাতে ও আগামী দিনে সরকার পতনের আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে দ্রুত তারুণ্য নির্ভর শক্তিশালী একটি পুনাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে জেলা ছাত্রদলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন থানা বিএনপি সভাপতি ও চৌহালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী।
এদিকে জেলার নদী ভাঙন কবলিত চৌহালী উপজেলায় ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি পদে ফারুক সরকার ও সম্পাদক পদে মাসুদ রানা সহ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এর পর ১ যুগপার হলেও হয়নি ছাত্রলীগের সম্মেলন। ২০১৩ সালে ফারুক সরকার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পদাক নির্বাচিত হয় এবং মাসুদ রানা দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মনোনিত হওয়ার পর থেকে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি অনেকটাই নেতৃত্ব শুণ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে চৌহালীতে ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুয়াশার।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পদাক ফারুক সরকার বলেন, আমি ছাত্রলীগের সভাপতি পদে থেকেই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। এরপর কোন সম্মেলন হয়নি, দায়িত্বও কাউকে বুঝে দেয়া হয়নি। তবে নিজেকে উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করে আবু দাউদ সরকার বলেন, আমি দায়িত্ব পাবার পর থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলিয়ে যাচ্ছি। জেলা ছাত্রলীগের সহযোগিতা পেলে নতুন সম্মেলনে দলের ত্যাগী নেতারাই দায়িত্ব আসবে বলে আশা করেন তিনি। এদিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু দাউদ ও সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদসহ কমিটির বেশির ভাগ নেতাই বিবাহিত এবং অছাত্র বলে জানা গেছে।
অন্য দিকে ১২ বছর ধরে চৌহালী উপজেলা ছাত্রদলের কোনো সম্মেলন হচ্ছে না। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৪ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদে বকুল সিকদার ও সাধারন সম্পাদক পদে শহিদুল ইসলাম সরকারসহ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মেয়াদ ২ বছর হলেও অদ্যাবধি নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতারাই বিবাহিত। তারা এখন নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি, চাকরি ও সংসার নিয়ে এলাকার বাইরে বসবাস করছেন। তবে ২০১১ সালে আমিনুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও হাবিবুর রহমান হাবিবকে যুগ্নআহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু চৌহালীতে তাদের কোন তৎপরতা নেই। এ কারনে চৌহালীতে অকেনটাই নিস্ক্রিয় ছাত্রদলের সাধারন কর্মী ও সমর্থকেরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্নআহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস নিজ নিজ সংগঠনের অবস্থান ভাল দাবি করে বলেন, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা ও থানা কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করা হবে। দলের নিয়ম মেনে ত্যাগী ও মেধাবীদের প্রাধাণ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরী করা হবে।

0 comments:

Post a Comment