বার্তা প্রধান: সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন আলোচিত শ্রমিকলীগ নেতা নাসির ও তার শ্যালক যুবলীগ নেতা টিক্কা জোড়া খুনের মামলার অন্যতম আসামি আব্দুস সাত্তার। সম্প্রতি তাকে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
এদিকে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত ১৬ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে স্মরণকালের ভূরিভোজের আয়োজন করেন বালুদস্যু খ্যাত এই আব্দুস সাত্তার। এ ভূরিভোজে প্রায় ৩শ মানুষ অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ সুলতানা জুই। ধানবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ সুলতানা জুই এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আব্দুস সাত্তার ধানবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১৫ মার্চ এই কমিটির অনুমোদন দেয় শিক্ষা অফিস।
এদিকে জোড়া হত্যা মামলার আসামি একটি স্কুলের অভিভাবক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়াও সুশীল সমাজ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় জোড়া হত্যা মামলার আসামি কীভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হলেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মাঝেই।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর বালুমহালের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যমুনা নদীর চরে সাত্তার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন শ্রমিকলীগ নেতা নাসির উদ্দিন এবং তার শ্যালক যুবলীগ নেতা টিক্কা। এ ঘটনায় আব্দুস সাত্তারকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময় থেকেই বালু সাত্তারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে পরিবহন শ্রমিকরা। নাসির-টিক্কা হত্যার ঘটনার কিছুদিন পর গ্রেফতার হন সাত্তার। বেশ কিছুদিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে খুনিদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালে তাদের ধরছে না পুলিশ।
শুধু তাই নয়, জোড়া খুনের মামলার আসামি হওয়া স্বত্বেও পুরো সমাজ-সেবক বনে গেছেন সাত্তার। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর জনসভায়ও আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে একটি মিছিল সমাবেশে যোগদান করে। ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর শুক্রবার নদীবন্দর, পর্যটন মোটেল ও ইকোনমিক জোন স্থাপনসহ সিরাজগঞ্জের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে যমুনা নদীর পাড়ে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচিতে ব্যানার নিয়ে জোড়া হত্যা মামলার আসামি আব্দুস সাত্তারকে দেখা গেছে।
গত বছর সাত্তারের নেতৃত্বে যমুনা নদীর মতি সাহেবের ঘাট এলাকায় জঙ্গীবাদ বিরোধী মানববন্ধন কমূর্সচিও পালন করা হয়। এছাড়া পৌর এলাকার হোসেনপুরসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও জোড়া হত্যা মামলার আসামি আব্দুস সাত্তারকে অতিথির আসনে দেখা যায়। তার উপস্থিতি দেখে অনেকেই হতভম্ব হলেও কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এবার তিনি অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ধানবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতিও নির্বাচিত হলেন। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলের নানা সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, প্রধান শিক্ষিকা, ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩৫৬ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ধানবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভালো চলছিল। শিক্ষার গুনগত মানও ভালো রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে বালুখেকো আব্দুস সাত্তার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদ্যালয় থেকে। অনেকেই তাকে মেনে নিতে পারছেন বলে তার সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।
এ বিষয়ে নাসির-টিক্কা স্মৃতি পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাকির হোসেন জানান, আব্দুস সাত্তার ধানবান্ধি স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। যদি হয়েই থাকে তাহলে বিষয়টি আপনার গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। যেহেতু ওই হত্যা মামলাটির বিচার এখনও শেষ হয়নি। সেহেতু এখনও তিনি ওই মামলার আসামি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আফরোজ জাহান জানান, স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। এ কারণেই গত ১৫ মার্চ কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়।