আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার দুই বছর পর গতকাল রবিবার দেশে তেলের দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে। সরকারের এ নির্বাহী আদেশে মধ্যরাত থেকেই তেলের নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে। পরিপত্র অনুসারে, লিটারপ্রতি অকটেন ও পেট্রলে ১০ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেলে তিন টাকা কমানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে তিন ধাপে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পেট্রল ও অকটেন লিটারপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং ডিজেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানো হবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে দাম কমানোর পর যদি গণপরিবহনগুলোতে ওই হারে ভাড়া কমে তবেই বাকি দুই ধাপে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই প্রথম দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে। যদিও গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
আট বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। প্রথম দফায় ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর পেট্রল ও অকটেনে লিটারপ্রতি ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে সাত টাকা কমানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর অকটেনে লিটারপ্রতি তিন টাকা ও পেট্রলে চার টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে দুই টাকা কমানো হয়। সে সময় প্রতি লিটার অকটেনের দাম ছিল ৭৭ টাকা, পেট্রলের ৭৪ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল ৪৪ টাকা। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি দাম বৃদ্ধির পর লিটারপ্রতি অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই বছরে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যাওয়ায় ভারত, পাকিস্তানসহ বহু দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। এ বিষয়ে জনদাবি উঠলেও সরকার সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত ৩১ মার্চ বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ফার্নেস তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৮ টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা করা হয়। ফার্নেস তেলের দাম কমায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
অন্যদিকে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম সব থেকে কম কমেছে। লিটারপ্রতি তিন টাকা কমলেও কৃষির সেচকাজে ব্যবহৃত ডিজেল বিক্রি করেই সরকার বেশি লাভ পাবে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ক্রয়ে সব ধরনের কর ও খরচ দিয়ে প্রতি লিটারের দাম পড়ছে ৪৮ টাকা ৮২ পয়সা। দাম কমানোর পর এখন থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন বিক্রি হবে ৬৫ টাকায়। তাতে লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনে লাভ হবে সরকারের ১৬ টাকা ১৮ পয়সা। এ ছাড়া অকটেনের দাম কমে ৮৯ টাকা লিটার হওয়ায় এতে লাভ হবে ১৩ টাকা ৪৬ পয়সা। পেট্রলে লিটারপ্রতি লাভ হবে ১৪ টাকা ৪৯ পয়সা।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে সব থেকে বেশি আমদানি করতে হয় ডিজেল। বছরে ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা মুনাফা পেয়েছে শুধু ডিজেল বিক্রি করে। দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে অকটেন ও পেট্রল আমদানি করা হয় না। দেড় লাখ টন অকটেন ও দুই লাখ টন পেট্রল বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসা কনডেনসেট পরিশোধন করে করা হয়। সব থেকে বেশি আমদানি করা হয় ডিজেল ও ফার্নেস তেল। ফার্নেস তেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়। আর ডিজেলের বড় অংশ ব্যবহার হয় কৃষির সেচকাজে ও পরিবহনে।
নির্বিকার পরিবহন মালিকরা : জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা এলেও পরিবহন মালিকরা রয়েছে নির্বিকার। সরকারি ঘোষণার পর পরিবহনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে তারা মতামত প্রকাশ করেনি কিছুই। তবে যোগাযোগ করা হলে গতকাল রাতে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কত কমাবে সেটি নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে আলাপ করেনি। ভাড়া পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত সরকারি কমিটি কোনো বৈঠকও আহ্বান করেনি। আমাদের কয়েকজন নেতা বিদেশে আছেন। আগামী মাসে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব কী করা যায়।’
0 comments:
Post a Comment