বছরের প্রথমদিন বই উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে সোমবারের মধ্যেই সারাদেশে বই পৌঁছে দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিশু-কিশোরদের হাতে বছরের প্রথমদিন বই তুলে দেয়াকে ঘিরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপশি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদযাপিত হয় বই আনন্দ উৎসব। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলে প্রতিদিনকে জানিয়েছেন এনসিটিবরি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল।
বললেন, ‘সোমবার রাত ১২টার মধ্যেই শতভাগ বই সারাদেশে পৌঁছে দেয়া হবে। অতীত ঐতিহ্য বজায় রেখে ১ জানুয়ারি বই উৎসব উদযাপন করা হবে। বই উৎসব উদযাপনের অপেক্ষায় এখন সারাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘প্রাক-প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের প্রায় সমস্ত বই ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকের বই নিয়ে যে স্থুল জটিলতা তৈরি হয়েছিল তার সিংহভাগই পৌঁছে দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। বাদবাকি বইগুলো আজকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। এ নিয়ে শঙ্কার কিছুই নেই।’
শুরুতে ছাপানো বইয়ের মাননিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কালক্ষেপন এবং কর্ণফুলীর ব্যর্থতায় তৈরি হয় নানা জটিলতা। বিশ্বব্যাংকের কারণে যেমন রিজার্ভ ডে রাখা সম্ভব হয়নি তেমনি কর্ণফুলীর অবহেলায় ছাপানো যায়নি সময়মতো লক্ষ্যমাত্রার বই। তাই একরকম অনিশ্চিয়তার ঘোরে আবর্তিত হতে থাকে বই উৎসব। সব অনিশ্চিয়তাকে পেছনে ফেলে এখন সবার মতো বই উৎসবরে অপেক্ষায় এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. মিয়া এনামুল হক সিদ্দিকীও।
সিরাজগঞ্জ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘একটি কাজ সঠিকভাবে করতে গেলে নানা রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। এটা মেনে নিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে হয়। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় সামনে চলে এসেছিল। অবশেষে আমরা সমস্যাগুলোর সমাধান করে মূল কাজটি করতে পেরেছি। এখন আমি আশাবাদী সঠিক সময়ে সবার হাতে হাতে বই পৌঁছে যাবে। সবার মতো আমিও উৎসবের দিকে তাকিয়ে।’
এনসিটিবি সরাসরি উপজেলা পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইগুলো পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের তত্ত্বাবধানে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বই সংগ্রহ করে। যার পরিবহন খরচও এনসিটিবি বহন করে বলে ড. সিদ্দিকী নিশ্চিত করেছেন।
৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে বই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘২৮ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে বই পৌঁছে যাবে। ২৯ তারিখ সকাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বই নিতে পারবে। এ দিন বই নেয়ার জন্য পুরো সময় পাচ্ছে তারা। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হলেও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এবার এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। যদি একটু ধীরগতিও হয় তাহলে ৩১ তারিখ সারাদিন তো থাকছেই। এ ব্যাপারটা ঘটবে শুধু প্রাথমিকের বইয়ের ক্ষেত্রে। প্রাক-প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের বই ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় পৌঁছে গেছে। যেখানে যায়নি সেগুলো বই না পৌঁছানোর কারণে না। হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী বইগুলো নেবে।’
এবার প্রায় ২৮ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ কোটির মতো বই ছাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল কর্তৃপক্ষা। যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। ৩৫ কোটির মধ্যে প্রায় ২৩ কোটি মাধ্যমিকের, ১১ কোটি প্রাথমিকের এবং ৬৬ লাখ বই প্রাক-প্রাথমিকের জন্য।
এদিকে ৩১ ডিসেম্বর প্রাইমারি-এবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসির ফলাফল ঘোষণা করা হবে। গণভবনে এ দিনই ছোট ছোট কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
১ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে এবারের বই উৎসব। এতে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসেন, এসসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারাণ চন্দ্র পালসহ আরো অনেকে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বই উৎসব উদযাপন করবে ন্যাশনাল সরাকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফজুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালিদসহ আরো অনেকেই।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিশু-কিশোরদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে আসছে সরকার।
0 comments:
Post a Comment