সোহাগ লুৎফুল কবিরঃ
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত নলকা সেতু ও হাটিকুমরুল গোলচত্বরের ৩টি মহাসড়কে খানাখন্দ সংস্কারের কারণে সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ও ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ও হাটিকুমরুল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের নলকা সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে যানবাহন চলাচলে অচল অবস্থা হয়ে পড়েছে। মহাসড়কজুড়ে যানজটের কারণে ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী হাজার হাজার মানুষে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। জনদুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আশির দশকে নির্মিত নলকা সেতুটি গত দুই মাস থেকে সেতুটির উপরিভাগে মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে। সে কারণে সেতুর দুই পারে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কোনাবাড়ী থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার, গোলচত্বর থেকে রায়গঞ্জের ভুইয়াগাতি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ও গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের হরিণচড়া ১০ কিলোমিটার মহাসড়কে তৃব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এই ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে যানবাহনগুলো।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে এ সেতুর কারণে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হলেও গত ১০/১২ দিন থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা হলে সেতুর উভয় দিকে ৮/১০ কিঃমিঃ অংশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়রা আরো জানান, সেতুর উপরিভাগে দীর্ঘদিনের ভংগুর জয়েন্ট এক্সপানশন গুলো এখনও মেরামত করতে পারেনি সওজ। সেতুর খানাখন্দও স্থায়ীভাবে মেরামত সম্ভব হয়নি। গত দুই মাস থেকে অস্থায়ীভাবে খানাখন্দ মেরামত করা হলেও তা টিকছে না। গত কয় দিনের বৃষ্টিতে নলকা সেতু ছাড়াও সয়দাবাদ-হাটিকুমরুল, হাটিকুমরুল-বনপাড়া, হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা ও হাটিকুমরুল-উল্লাাপাড়া মহাসড়কেও প্রচুর খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বাইপাস সড়ক দিয়ে সর্টকার্টে গাড়িগুলো চলার কারনে শহরের রাস্তা বড় বড় গর্তে খানাখন্দে ভওে গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানান, সেতু অতিক্রম করার পর যানবাহনগুলো নলকা সেতুর পূর্ব পাড়ে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। সরু সেতুটির একপাশ বন্ধ রেখে আরেক পাশ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এই রেশনিং পদ্ধতির কারণে সেতুর দু'পাশে যানবাহন আটকা পড়ে দুর্ভোগ বেড়েছে। তাছাড়া ওই কারণেই পশ্চিম সংযোগ সড়কে অন্তত ৭-৮ কিঃমিঃ এলাকাজুড়ে যানবাহনগুলো দীর্ঘ লাইনে ধীরগতিতে চলছে। তিনি আরো জানান, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সলঙ্গা থানা, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা ও ট্রাফিক পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের হাটিকুমরুল থেকে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কের চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ১৬-১৭ কিলোমিটার ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের তাড়াশের খালকুলা থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের নলকা সেতু-হাটিকুমরুল পর্যন্ত আরও প্রায় ৫ কিলোমিটার মহাসড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সওজ অফিস খানাখন্দগুলো সংস্কার করার চেষ্টা করলেও টানা ৩ দিনে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ সংস্কার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ মহাসড়কের নলকা ব্রীজটি সংস্কারের কাজ চলায় সেতুর ওপর দিয়ে রেশনিং পদ্ধতিতে যানবাহন চলায় ব্রীজের দু'পাড়ে যাত্রী ও মালবাহী শত শত যানবাহন আটকা পড়ছে। আমরা নিরুপায় তবে সওজ প্রকৌশলীদের আরও তৎপর হওয়া উচিৎ।’
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে জেলার সব কয়টি মহাসড়কেরই বেহাল অবস্থা। প্রতিটি মহাসড়কেই যানজট ও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। আমাদের করার কিছুই নেই। যানজট কিছুটা নিরসনে একটি লেন আটকে আরেকটি দিয়ে পারাপার চালু রাখার কারণে ধীরগতি আরও বেড়েছে।
সিরাজগঞ্জ সওজ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে মেশিন আনা হয়েছে। কিন্তু নলকা সেতুর উপরিভাগের ভংগুর জয়েন্ট এক্সপানশন গুলোর উপরের বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রন এত শক্ত, কেটে সহজে অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিশ্রম করেই যাচ্ছি কিন্তু মহাসড়কের মেরামত কাজও বৃষ্টির কারণে উঠে যাচ্ছে।’ নলকা সেতুর ওপরে এক ঘণ্টা কাজ করা হলে উভয় দিকে ৪ কিঃ মিঃ করে প্রায় ৮ কিঃমিঃ যানজট হয়। বৃষ্টি শেষ না হলে এসমস্যা থাকবেই, এবং এর মধ্যেই চলাচলও করতে হবে।’
সিরাজগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মহাসড়কের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্ষণের কারণে কাজ করতে না পারায় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ১৫ টনের অধিক ওজনের গাড়ি পার হতে না দিলেও মহাসড়কে ৫০/৬০ টন পণ্য নিয়ে যানবাহন চলছে। যে কারণে মহাসড়ক টিকছে না। আবহাওয়া ভালো হলে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক গুলো সংস্কার করা হবে।