Sunday, August 9, 2015

সিরাজগঞ্জে লক্কড়ঝক্কর বাসের পোয়াবারো

দেশের ২২টি মহাসড়কে স্বল্পগতির ৩ চাকার
যানবাহন চলাচলে সরকারি নিষেধাজ্ঞার
আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৩টি মহাসড়ক
রয়েছে। তালিকাভুক্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর
পশ্চিমপাড়ের নলকা-হাটিকুমরুল, হাটিকুমরুল-
বগুড়া ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে
বর্তমানে ৩ চাকার যানবাহন চলাচল কমে
আসলেও এসব মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন
লক্কড়ঝক্কর বাস চলাচল বেড়ে যাওয়ায়
দুর্ঘটনার আশংকা রয়েই যাচ্ছে। এদিকে,
সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে ফিটনেসবিহীন
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা
হলেও জেলার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে চলমান
অধিকাংশ বাসেরই রেজিস্ট্রেশন ও
ফিটনেস নেই। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে
এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও অজ্ঞাত
কারণে প্রশাসন রয়েছে নীরব। এ অবস্থায়
সম্প্রতি ঢাকা থেকে ৩৫টি ফিটনেসবিহীন
বাস ক্রয় করে সিরাজগঞ্জ এনে ন্যাশনাল
ট্রাভেলসের মালিক ইসমাইল হোসেন
সেগুলো মেরামত করাচ্ছেন। যার মধ্যে ৫টি
বাস বিআরটিএ’র ইনডোর্সমেন্ট ছাড়াই
ইতিমধ্যে সড়ক-মহাসড়কে নামানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রভেদে এসব বাসের নম্বর
প্লেটও বদলানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়ক
যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ হাইকোর্টের
জারি করা নির্দেশ উপেক্ষিত হলেও
প্রশাসনের মাথাব্যথা নেই।
সরজমিন জানা গেছে, মহাসড়কে ৩ চাকার
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে
বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে বাস মালিকরা।
রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস না থাকলেও তারা
নতুন করে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সংযোগ
মহাসড়কের সয়দাবাদ ও কড্ডা মোড় থেকে
হাটিকুমরুল গোলচত্বর এবং সিরাজগঞ্জ
শহরের বাস টার্মিনাল থেকে মহাসড়ক হয়ে
রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর
রুটে বেশকিছু বাস নিয়মিত চলাচল শুরু
করেছে। বেড়েছে সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি ও
এনায়েতপুর সড়কেও। আবার কেউ কেউ
লক্কড়ঝক্কর বাস লোহার দরে কিনে এনে
নম্বর প্লেট বদলে পুরাতন বাসের নম্বর প্লেট
লাগিয়ে রাস্তায় চালাচ্ছে। সম্প্রতি
সিরাজগঞ্জের ন্যাশনাল ট্রাভেলস্ বাসের
মালিক ও সিএনজি অটোরিকশা বিক্রেতা
ইসমাইল হোসেন ঢাকার দিলকুশা বাণিজ্যিক
এলাকার উত্তরা মোটরস্ লিমিটেড থেকে
ট্যাক্স-টোকেন ও ফিটনেসবিহীন ৩৫টি
লক্কড়ঝক্কর ডাম্পিং গাড়ি নিলামে ক্রয়
করে এনেছে। শহরের বিড়ালাকুঠি (পুরাতন
চালা বাসটার্মিনাল) এলাকায় ওইসব বাস
রেখে সেগুলোর জরুরি মেরামত করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই মেরামত শেষ করে ৫টি বাস
মহাসড়কের কড্ডা ও সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি-
এনায়েতপুর আঞ্চলিক রুটে চালানো হচ্ছে।
বাকি চলমান মেরামতকৃত বাসের মধ্যে
ঢাকা-মেট্রো-ব-১৪-১৪২৪ থেতে ২৬ পর্যন্ত
এবং মুন্সীগঞ্জ-ব-১১-০০০১ থেকে মুন্সীগঞ্জ-
ব-১১-০০২৯ পর্যন্ত নম্বরের ৩২টি বাস রয়েছে।
রাস্তায় নামানো ৫টি বাসের মধ্যে
সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি-এনায়েতপুর আঞ্চলিক
সড়কে চলাচলরত একটির নম্বর ঢাকা-মেট্রো-
ব-১৪-১৪২৭ হলেও সেটি পরিবর্তন করে ঢাকা-
মেট্রো-চ-৪২৪৯ লিখে নেয়া হয়েছে। আর এসব
বাসে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারগুলো
বিপজ্জনক জেনেও রং-চং করে ব্যবহারের
জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ওই বাসের চালক বাবু জানান, বাসটির
মালিক ইসমাইল সাহেবের হলেও
সিরাজগঞ্জ বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি
সাহেব নম্বর প্লেট বদলে (ঢাকা-মেট্রো-
ব-১৪-১৪২৭) পুরাতন (ঢাকা-মেট্রো-চ-৪২৪৯)
নম্বর প্লেট লাগিয়ে রাস্তায় নামিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের পরিদর্শক
জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, অনলাইনে ঢুকে
দেখা গেছে এসব গাড়ির অধিকাংশই
ফিটনেসবিহীন। ট্যাক্স-টোকেনও
মেয়াদোত্তীর্ণ। দু’একটি বাসের ফিটনেট
থাকলেও ২০১১ সালের আগেই তার মেয়াদ
অতিক্রম করেছে। পরিবর্তিত নম্বরের
বিষয়ে তিনি বলেন, অনলাইন রেজিস্ট্রারে
এ (ঢাকা-মেট্রো-চ-৪২৪৯) নম্বরের হদিস
মেলেনি।
ন্যাশনাল ট্রাভেলস্ের বাসের মালিক ও
সিএনজি অটোরিকশা বিক্রেতা ইসমাইল
হোসেন শনিবার দুপুরে বলেন, ঢাকার উত্তরা
মোটরস্ থেকে পুরাতন গাড়িগুলো টেন্ডারের
মাধ্যমে কিনেছি। এগুলোর মালিকরা উত্তরা
মোটরস্-এর টাকা পরিশোধ করতে না পারায়
গাড়িগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকলেও এসবের
কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে। বাস মালিক
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনি’র কাছে যে
বাসটি বিক্রি করেছি, সেটির প্রকৃত নম্বর
এই মুহূর্তে মনে নেই।
বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
মনিরুজ্জামান মনি বলেন, মালিক সমিতিতে
প্রায় ৩৫০টি বাস আছে। এরমধ্যে
কাউন্টারভিত্তিক ও দূরপাল্লার রুটে
চলাচলকৃত প্রায় দেড়শতাধিক বাসের
কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। আর বাকিগুলোর
কাগজপত্র সঠিক নেই। এগুলোকে অফিসিয়াল
ভাবে ফিটনেসবিহীন বলা হলেও
মেকানিক্যালভাবে এগুলো ফিট। নম্বর প্লেট
বদলের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময়
পুরাতন গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকায়
সেগুলোর নম্বর প্লেট বদলে আমরা ব্যবহার
করে থাকি। শুধু আমি না, বাস মালিক
সমিতির সভাপতি আব্দুল সালাম জানবক্স ও
আব্দুল বাছেদ ভূঁইয়া ঠাণ্ডুও একই কায়দায়
সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর আঞ্চলিক সড়কে
কয়েকটি বাস চালাচ্ছে। অন্যান্য রুটে এমন
বাসের সংখ্যা আরও আছে। বাইরের বাস
ক্রয় করে সিরাজগঞ্জ আনার ক্ষেত্রে
স্থানীয় বিআরটিএ অফিসে সেগুলো
ইনডোর্সমেন্ট করার বিষয়টি তার জানা নেই
বলে দাবি করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক
মো. আশরাফুজ্জামান জানান, ঢাকায়
ট্রাফিক পুলিশসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত
ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন বা ট্যাক্স ও
ইনস্যুরেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি ধরার পর
দীর্ঘদিন মালিক না পেয়ে ডাম্পিং করে
রেখে দেয়। মফস্বল শহরের কতিপয় বাস
মালিক বা ব্যবসায়ীরা ওইসব গাড়ি পুরাতন
লোহার দরে নিলামে কিনে এনে রং-চং
করে চালানোর চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর নিয়মিত অভিযান থাকলে এ ধরনের
অবৈধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ পাবে না। দেশের
যে কোন প্রান্ত থেকেই বাস ক্রয় করা হোক
না কেন, সিরাজগঞ্জের রাস্তায় চলাচল
করতে গেলে স্থানীয় বিআরটিএ অফিসে
সেগুলো ইনডোর্সমেন্ট করাতে হবে।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবেদ
আলী বলেন, ঢাকা থেকে আনা ডাম্পিংয়ের
বাস সিরাজগঞ্জে আনা হয়েছে কি-না, তা
জানা নেই। ফিটনেসবিহীন বাস প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, মহাসড়কে ৩ চাকার যান বন্ধ
হওয়ায় এমনিতেই ঝামেলায় আছি। এ
অবস্থায় ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে
অভিযান চালালে ঝামেলা আরও বাড়বে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হাসান
তালুকদার বলেন, ঢাকা থেকে আনা ডাম্পিং
ও ফিটনেসবিহীন বাস সম্পর্কে তেমন ধারণা
নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

0 comments:

Post a Comment