Monday, August 24, 2015

সিরাজগঞ্জে ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দী

যমুনার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
রোববার দুপুরে যমুনা নদীর হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ১৩.৭৪ মিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদসীমার ৩৯ সে.মি উপরে। কোনো কোনো এলাকা বিপদসীমার ৪৪ সে.মি উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, গত ২ দিনে জেলার ৪টি উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির ও হাটবাজারসহ হাজার হাজার একর আবাদি জমি ডুবে গেছে।
রোববার (২৩ আগস্ট) দুপুরের দিকে বন্যা কবলিত কাজিপুরের মাইজবাড়ী, ঢেকুরিয়া, বিলচতল ও মেঘাই এলাকা ঘুরে জানা যায়, শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেল থেকে হঠাৎ করে যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো মুহূর্তেই প্লাবিত হয়। হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে।
নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে, বন্যা কবলিতরা এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি।
কাজিপুরের মাইজবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, যমুনার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরাতন মেঘাই-মাইজবাড়ী বাঁধের ঢেকুরিয়া এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে মাইজবাড়ী ইউনিয়নের বিলচতল, মেঘাই, কুনকুনিয়া, পলাশপুর, পাইকরতলী, হাটগাছা মল্লিকপাড়া গ্রামে পানি ঢুকে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার অন্যতম ঢেকুরিয়া হাট ডুবে যাওয়ায় হাটের প্রায় ৩ শতাধিক দোকানপাট ওয়াপদা বাঁধে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কাজিপুরের নিশ্চিন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক স্বপন বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার চরাঞ্চলের ৭টি ইউনিয়নেই কমবেশি বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নিশ্চিন্তপুরের কাজলগ্রাম, লক্ষীপুর, বাঁশজান, ও নিশ্চিন্তপুর পূর্বপাড়া, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, মনসুরনগর খাসরাজবাড়ী, চরগিরিশ, শুভগাছা ও কাজিপুর সদর ইউনিয়নের তীরবর্তী অঞ্চলসমূহ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাফিউল আলম বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২৫শ’ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি হাট-বাজার বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস পার্শ্ববর্তী স্কুলে চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রেনজন চাম্বুগং বাংলানিউজকে জানান, সদর উপজেলার ছোনগাছা, খোকশাবাড়ী, মেছড়া, কাওয়াকোলা, কালিয়া হরিপুর ও সয়দাবাদ ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বেলকুচি সদর, বড়ধুল ও রাজাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যমুনা নদীর বেলকুচি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আলম বাংলানিউজকে জানান, শাহজাদপুরের কৈজুরী, রুপবাটি, ডালা, সোনাতনী ও জালালপুর ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ঈমাম বাংলানিউজকে জানান, শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি বিপদসীমার ৩৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  আরও দু’দিন পানি বাড়তে পারে। তবে, এখনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

0 comments:

Post a Comment