Saturday, August 15, 2015

‘মেম্বর-চেয়ারম্যান দেখপার আইসে না’

তখন সন্ধ্যা নামার
প্রস্তুতি। সিরাজগঞ্জ জেলার সদর
উপজেলার বিয়ারাঘাট। যমুনা নদী তার
সর্বগ্রাসী ক্ষিপ্রতা নিয়ে বয়ে চলেছে।
বছরের পর বছর ধরে এ নদী পাড়ের মানুষ ও বসতিকে গ্রাস করে চলেছে। এতে সর্বশান্ত ও গৃহহীন হচ্ছে মানুষ।
যমুনার তীরবর্তী এই বিয়ারাঘাট
এলাকায় প্রায় ৫শ’ পরিবারের আড়াই
হাজার সদস্য রয়েছেন।
নিজেদের বসতভিটা রক্ষা করতে
নিজেদের উদ্যোগে যমুনার ভাঙন
ঠেকাতে বাঁশসহকারে মাটি আটকানোসহ
নানা প্রকারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন
তারা। যমুনা নদী ঠিকই গ্রাস করে নেয়
মানুষ, গৃহপালিত গবাদি পশু ও মূল্যবান
সম্পদ।
‘সত্তর’ বছরের বয়োবৃদ্ধা সালেহা।
ছেলে-মেয়ে ও নাতিপুতি নিয়ে ৮ সদস্য
তার পরিবারে। চলতি বছরে ঈদের দিনে
যমুনা নদী তার বসতভিটাটুকু পুরোপুরি
গ্রাস করে ফেলেছে।
এদিকে রাজা নামের এক ভুষিমাল
ব্যবসায়ীর ৮ লাখ টাকার মালামাল এ
বছরই যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কিন্তু একটি টাকাও সাহায্য পাননি
তিনি।
সুরভী দাস, অঞ্জনা শিং, ঝর্ণা শিং,
নাজমা, অনিতা, সেলিনা, নূরজাহান,
নজরুল, আমিনুল, আলামিন এদের সবার
অবস্থা প্রায় একই। এরা সবাই যমুনার
আগ্রাসনের শিকার।
কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি, বছরের পর বছর
ধরে যমুনা নদীর দ্বারা সরাসরি
ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে নেই কোনো
সরকারি-বেসরকারি সাহায্য। স্থানীয়
জনপ্রতিনিধিরাও ভাঙন কবলিত মানুষের
পাশে এসে দাঁড়াননি। শোনেনি তাদের
দুঃখ-দুর্দশার কথা।
বাংলানিউজের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১৪
আগস্ট) সরেজমিনে ভাঙন কবলিত
এলাকাগুলোতে গেলে মানুষ তাদের দুঃখ
ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। একে একে
সবাই নাম লেখানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে
পড়েন।
তারা এটাই ভেবেছেন যে, খাতায় নাম
লেখালেই বোধহয় কোনো সাহায্য
পাওয়া যেতে পারে। নিজের নাম
লেখাতে গ্রামের নানাপ্রান্ত থেকে
ছুটে আসতে শুরু করে নারী-পুরুষ ও
বিভিন্ন বয়সের লোকজন।
সরাসরি ভোটে নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিত এলাকায়
এসে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা একদিনও
শোনেননি বলে তারা ক্ষুব্ধ হন এবং
জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নিজেদের
স্পষ্ট মতামত প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সুরভী দাস, রত্না শিং, সাধনা
রানী ও অঞ্জনা শিং বাংলানিউজকে
জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভূমিহীন।
রেলওয়ে কলোনিতে রেল বিভাগের
জায়গায় ছিলাম। তারপর সরকার
আমাদের বিয়ারাঘাট আদিবাসী
পল্লীতে জায়গা দিয়েছে। কিন্তু এখানে
এসেও আমরা যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে
পড়েছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ এসে
আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।
ব্যবসায়ী রাজা মিয়া বলেন, এই বছর
আমার ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আমার মোট জায়গা ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে
সাড়ে ১৬ শতাংশ ইউক্যালিপটাস গাছের
বাগান, বসতবাড়ী ও আম কাঠালে বাগান
পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
একটি টাকার সাহায্য আমরা সরকারের
কাছ থেকে পাইনি।
ওই আদিবাসী পল্লীর ফাতেমা নামক এক
গৃহবধূ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘মেম্বর-
চেয়ারম্যান দেখপার আইসে না’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী
বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদিন
আগে বন্যার পরে পানি উঠলে আমরা ওই
এলাকায় সদর ইউএনওকে নিয়ে পরিদর্শন
করি। পরবর্তীতে ঈদ উপলক্ষে
ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী
প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার
বাংলানিউজকে জানান, বন্যার সময়ে
বাজেট স্বল্পতার কারণে ওই এলাকায়
কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে
এরকম পরিস্থিতি হলে জরুরি ভিত্তিতে
পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

0 comments:

Post a Comment