Thursday, August 6, 2015

সিরাজগঞ্জে অটোরিকশা ৪০০০, বৈধ চালক ৭০

ইউসুফ দেওয়ান রাজুঃ
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক মহাসড়কে সিএনজি চালিত প্রায় ৪ হাজার অটোরিকশা চলাচল করলেও বৈধ নিবন্ধনধারী চালকের সংখ্যা মাত্র ৭০ জন। এসব যানবাহনের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২৮০টির। বাকিগুলো অনুমোদনবিহীন।
অটোরিকশা অনুমোদনের সময় ‘মহাসড়ক ব্যতীত সমগ্র জেলায়’ চলাচলের অনুমোদন থাকলেও ২০০৮ সাল থেকে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকা বিশিষ্ট হালকা এ যানবাহনগুলো। মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি ঈদের আগে ও পরে সিরাজগঞ্জের দুটি
মহাসড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে
অটোরিকশার ১৫ জন যাত্রী। এদিকে মহাসড়কে অটোরিকশা নিষিদ্ধের সরকারি নির্দেশনার প্রতিবাদে ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের
দাবিতে জেলাব্যাপী আন্দোলনে নেমেছে
এ যানবাহন সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকরা। এ নিয়ে
জেলাব্যাপী শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বুধবার সিরাজগঞ্জ বিআরটিএ অফিস, সিএনজি
অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে
কথা বললে এসব তথ্য উঠে আসে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল
গোলচত্বর, হাটিকুমরুল গোলচত্বর-কড্ডার মোড়,
হাটিকুমরুল গোলচত্বর-উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর, হাটিকুমরুল গোলচত্বর-চান্দাইকোনা সলঙ্গা ও কাচিকাটা
মহাসড়কে প্রায় সহস্রাধিক অটোরিকশা চলাচল করে আসছিল। সরকার গত ১ আগস্ট থেকে মহাসড়কে তিন চাকা বিশিষ্ট যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে হাটিকুমরুল গোলচত্বরকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ, কড্ডার মোড়, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চান্দাইকোন ও সলঙ্গা চলাচলরত
অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকরা বিপাকে পড়ে। তবে
হাটিকুমরুল গোলচত্বর-কাচিকাটা মহাসড়কে সাইড রাস্তা থাকায় মহাসড়কটি সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পরেনি।
এতে মহাসড়কগুলোতে চলাচলরত প্রায় ৬/৭শ
অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক বিপাকে পড়েছে। তবে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে প্রায় সোয়া তিন হাজার অটোরিকশা যথা নিয়মেই চলাচল করছে।
এদিকে মহাসড়কে অটোরিকশা নিষিদ্ধের ঘোষণা
প্রত্যাহারের দাবিতে গত দু’দিন ধরে আন্দোলন
চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকরা। এর সঙ্গে
সংহতি প্রকাশ করেছে ব্যাটারি চালিত ইজি-বাইক
শ্রমিকরাও। গত রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু সেতুর
পশ্চিম পাড় ব্যস্ততম হাটিকুমরুল গোলচত্বরে এবং
সোমবার জেলা শহরের বাজার স্টেশন স্বাধীনতা
স্কয়ারে ও মঙ্গলবার বিকেলে কড্ডার মোড়ে এ
দাবিতে প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ করেছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি সরকারি নিষেধাজ্ঞা বহাল
থাকলে জেলার প্রায় ৫ হাজার অটোরিকশা ও ব্যাটারি
চালিত ইজিবাইকের মালিক-শ্রমিকরা বিপাকে পড়বে।
জীবিকা হারাবেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কে
এসব যান নিষিদ্ধ হলে ৬ থেকে ৭শ মালিক-শ্রমিক
বেকায়দায় পড়বে। এরপরও মালিক-শ্রমিক নেতারা সব
অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকে শ্রমিক ও
মালিকদের সম্পৃক্ত করে আন্দোলনে
নেমেছে।
সিরাজগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো.
আশরাফুজ্জামান বাংলামেইলকে জানান, জেলায় গত সাত
বছরে ৩ হাজার ২৮২টি অটোরিকশা বৈধ
রেজিস্ট্রেশন ও রুট-পারমিট হলেও চালকদের
লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে মাত্র ৭০টি। ৫০ জন
চালক শিক্ষানবীশ হিসেবে আবেদন করেছে।
অধিকাংশ চালকের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও
যোগ্যতা না থাকায় তারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন
করেনি।
বিআরটিএর সহকারী পরিচালক বলেন,
‘অটোরিকশাগুলোর রেজিষ্ট্রেশনেই মহাসড়ক
ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ
অবস্থায় তারা কীভাবে মহাসড়ক ব্যবহারের
অনুমোদন চাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। আর সড়ক-
মহাসড়কগুলোতে সহস্রাধিক ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক
চলাচল করলেও তাদের বৈধ কাগজপত্র ও
অনুমোদন কে দেবে তা আমাদের জানা নেই।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন)
মো. আবেদ আলী জানান, জেলায় প্রায় সাড়ে ৩
হাজার অটোরিকশা বৈধভাবে চললেও আরো প্রায় ৫
শতাধিক চলছে অবৈধভাবে। এমনিতেই তারা মহাসড়ক
থেকে বিতাড়িত। এ অবস্থায় বৈধতার বিষয়ে তাদের
বিরুদ্ধে এ মুহূর্তে অভিযান চালালে তারা তো
আরো বিপাকে পড়বে।
জেলা অটোরিকশা ও অটোটেম্পু শ্রমিক
ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফি
জানান, অটোরিকশার সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা
বেশির ভাগই অশিক্ষিত। রুট পারমিটে কী লেখা
আছে তা তাদের বোঝার কথা নয়।
শফিকুল ইসলাম শফি আরো বলেন, মহাসড়কে
অটোরিকশা চলাচল করতে না পারায় শ্রমিক-মালিকরা গত
ক’দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঠিক এ
মুহূর্তে চালক ও অটোরিকশার লাইসেন্সের
বিষয়ে সঠিক তথ্য দেয়া কঠিন। তবে অটোরিকশার
রুট পারমিটে মহাসড়ক ব্যতীত সমগ্র জেলায়
চলাচলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এদেশে
অনেক কিছুই তো অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলে।
হাটিকুমরুল গোলচত্বর সিএনজি অটোরিকশা মালিক
সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান বাংলামেইলকে জানান,
গোলচত্বর থেকে মহাসড়ক দিয়ে সিরাজগঞ্জ,
কড্ডা, চান্দাইকোনা, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায়
সর্বোচ্চ এক হাজার অটোরিকশা চলাচল করে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে মূলত এ অটোরিকশাগুলোই
সমস্যা। মহাসড়কে চিহ্নিত সাদা দাগের বাইরে চলতে
দিলেও এই সমস্যা দূর হতো।
সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনের ইজিবাইক স্ট্যান্ডের
চেইন মাস্টার লালন মিয়া জানান, বৈধ কাগজপত্রের জন্য
বিআরটিএর অফিসে খোঁজ নিয়েছিলাম।
আবেদনপত্র জমা না নিয়ে তারা বলেছে, দুই
বছরেই গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এর আবার অনুমোদন
কি?

0 comments:

Post a Comment