Monday, May 30, 2016

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না

পল্লী বিদ্যুৎ
সিরাজগঞ্জে ঘুষ ছাড়া মেলে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) নতুন সংযোগ। আবেদনের পর পবিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় দালালচক্রকে ঘুষ না দিলে ওই ফাইল নড়ে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দালালদের দৌরাত্ম্য ও পিডিবির অবৈধ অনুপ্রবেশে জেলার পবিস অঞ্চল সংকুচিত হবে। ফলে কমবে সরকারি রাজস্ব আহরণ।
অভিযোগ রয়েছে, সিরাজগঞ্জ পবিস-১ এর প্রধান কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমানের নেতৃত্বে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালচক্র প্রকাশ্যে গ্রাহকদের ফাইলপত্র ও সংযোগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন। একই অবস্থা তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও শাহজাদপুর জোনাল অফিসেও।
জানা গেছে, পবিস-১ এর সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক তুষার কান্তি দেবনাথের স্থালাভিষিক্ত হন হাসান আহমেদ মজুমদার। উল্লাপাড়া প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য জোনাল অফিসের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে গ্রাহকদের সংযোগ আবেদনের সংখ্যা শুধু বাড়ছে।
জানা যায়, বিভিন্ন জটিলতার কারণে সংযোগ পাচ্ছেন না গ্রহকরা। এমকি কেউ কেউ হয়রানির ভয়ে সংযোগ নিতেও আগ্রহ হারাচ্ছেন। যারা ঘুষ দিচ্ছেন তারাই শুধু পাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সংযোগ। সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীন উল্লাপাড়া প্রধান কার্যালয়, শাহজাদপুর, তাড়াশ ও রায়গঞ্জ জোনাল অফিসেও একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়া পোল সম্প্রসারণসহ বিদ্যুৎ সংযোগ কাজে মালামাল পরিবহনের জন্য ঠিকাদাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে সংযোগ নির্মাণ কাজ হয়ে থাকছে বন্ধ। জানা গেছে, প্রতিটি আবাসিক, বাণিজ্যিক ও সেচ সংযোগের জন্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার, শিল্প সংযোগের ক্ষেত্রে ২/৩ লাখ এবং গ্রাম বিদ্যুতায়নে ৩/৪ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে।
টাকা না দিলে আবেদনগুলো নানা অজুহাতে ফাইল আটকে রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিভিন্ন গ্রামে সংযোগ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও অজ্ঞাত কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হচ্ছে না। ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের নামে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। আবার কাগজে কলমে কম লোড দেখিয়ে ট্রান্সফরমার পরিবর্তন না করেই সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
গত দু’বছর ধরে পবিসের আওতাধীন চারটি উপজেলার প্রায় ৭৫টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ নির্মাণ শেষ হলেও কারিগরি বিভাগের অনুমতি না পাওয়ায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর প্রধান কার্যালয় সদর উপজেলার শিয়ালকোলসহ জোনাল অফিস বেলকুচি ও কাজিপুরে গ্রাহক হয়রানির মাত্রা কিছুটা কম হলেও দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েই গেছে। দালালদের হয়রানির কারণে সদর উপজেলায় শত শত গ্রাহক এখন পিডিবির লাইনের দিকে ঝুঁকছেন।
হয়রানির কারণে সদর উপজেলার এসব ইউনিয়নে ১০ হাজার গ্রাহক পবিস ছেড়ে পিডিবির সংযোগ নিয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সিরাজগঞ্জে পবিসের আওতা কমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কামনা করেছেন গ্রাহকরা।
তাড়াশ সদরের রুহুল আমিনের অভিযোগ, ২০১৩ সালে আবেদন করলেও টাকা দিতে না পারায় এখনও তিনি সংযোগ পাননি। অথচ একই এলাকায় তপন গোস্বামী নামে এক ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে সংযোগ পেয়েছেন।
উল্লাপাড়ার চক-পাঙ্গাসী গ্রামের আমিরুল, জহুরুল ও সাইফুল জানান, মিটারের টাকা দেওয়া হলেও বিদ্যুতের সংযোগ নির্মাণ শেষে তাদের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ওই এলাকার ২৭৪ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
সলংগা থানার ধোপাকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলাম, চড়িয়া শিকার গ্রামের হাসান আলী বলেন, অনেক দেন-দরবার করে সংযোগ না পেয়েও অবশেষে তারা সংযোগপ্রতি ৪০ হাজার টাকা করে ঘুষ দালালদের দিয়েছেন।
তাড়াশ থানার বারুহাঁস ইউপির চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন অভিযোগ করেন, উল্লাপাড়া পবিস প্রধান কার্যালয়ের কারিগরী বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমানের সঙ্গে আঁতাত করে লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ (উল্লাপাড়া) এর বোর্ড সভাপতি মোস্তফা কামাল সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা বেশ কয়েকটি গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ পেয়েছেন। বোর্ড সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পবিস উল্লাপাড়ার মহা-ব্যবস্থাপক হাসান আহমেদ মজুমদার বলেন, তিনি যোগদানের পর গত ১০ মাসে ৪৮ হাজার নতুন সংযোগ দিয়েছেন। আরও ৭ হাজার নতুন আবেদন জমা পড়েছে। ১০ মাসে শতাধিক অভিযোগ পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে কিছুই করা যায় না।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর মহা-ব্যবস্থাপক মো. আজাহার আলী বলেন, তার নিয়ন্ত্রণাধীন সদর উপজেলার শিয়ালকোল প্রধান কার্যালয়সহ বেলকুচি ও কাজিপুর জোনাল অফিসের ৮০ ভাগ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ (উল্লাপাড়া) প্রধান কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান তার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার টেবিলে ২৪ ঘণ্টার বেশি ফাইল পড়ে থাকে না।

0 comments:

Post a Comment