Thursday, July 30, 2015

জেলা প্রশাসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ২১ নির্দেশনা

জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে
আইনের আওতায় কাজ করার কথাও বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে
আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী জেলা প্রশাসক
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে
প্রধানমন্ত্রী এ সব নির্দেশনা দেন। রাষ্ট্র তথা
জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণই হবে আপনাদের মূল
লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে
অবিচল থাকলে আপনাদের পক্ষে যথাযথভাবে
দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সরকারি সেবা গ্রহণে কেউ যেন
হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন,
পাচার ও মাদক দ্রব্যের অপব্যবহারসহ যৌতুক ও
বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে। প্রতিবন্ধী,
অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে
বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্রামীণ
অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় মাঝারি
শিল্পের বিকাশে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সময় জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর
লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সহায়তা করার
নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের পাশাপাশি, বিভাগীয়
কমিশনার, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী,
উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব এবং সচিবসহ সংশ্লিষ্ট
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
সম্মেলনে মোট ২২টি অধিবেশন হবে। এর
মধ্যে কার্য অধিবেশন থাকবে ১৮টি।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ
হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, অংশগ্রহণকারী
মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৩৯টি হলেও দুই থেকে তিনটি
মন্ত্রণালয় একত্রিত করে মোট ১৮টি অধিবেশনে
সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। সম্মেলনে ডিসিদের
পক্ষ থেকে ২৫৩টি প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে
২৫টি প্রস্তাব ভূমি এবং ২৪টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।
প্রধানমন্ত্রীর ২১টি নির্দেশনা-
১. সরকারি সেবা গ্রহণে কেউ যেন হয়রানি বা
বঞ্চনার শিকার না হয়;
২. নারী ও শিশু নির্যাতন, পাচার ও মাদক দ্রব্যের
অপব্যবহারসহ যৌতুক ও বাল্যবিবাহ রোধ করতে
হবে;
৩. প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা
জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে
হবে;
৪. গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময়
স্থানীয় মাঝারি শিল্পের বিকাশে ব্যবস্থা নিতে
হবে;
৫. জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর
লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সহায়তা করতে
হবে;
৬. তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের
সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে হবে;
৭. নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ছাত্রছাত্রীদের ঝরে
পড়ার হার কমানো এবং ঝরে পড়াদের মূল ধারায়
ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
৮. ভূমি শাসন ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে;
৯. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি
ইত্যাদি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে
প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে
হবে।
১০. ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে
ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে;
১১. পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ
সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত
করতে হবে;
১২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এবং এ সংক্রান্ত
স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক
পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
১৩. সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও
আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম
আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে;
১৪. জেলা প্রশাসকেরা জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন
কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ
কমিটিকে আরো সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ
করতে হবে;
১৫. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে
জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে;
১৬. শিল্পাঞ্চলের শান্তিরক্ষা, পণ্য পরিবহন ও
আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
হবে।
১৭. ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে
হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে
কোনো প্রচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে
হবে;
১৮. নারী উন্নয়ন নীতি- ২০১১ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ও
বাস্তবায়ন করতে হবে;
১৯. শিশুকিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের
লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নিশ্চিত করতে
হবে।
২০. কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এবং
এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে;
২১. পার্বত্য জেলাগুলোর ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য,
বনাঞ্চল, নদী জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং
গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে।

0 comments:

Post a Comment