Sunday, June 28, 2015

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শন কালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে হাসপাতাল পরিচালনায় দায়িত্ব অবহেলার চিত্র ধরা পড়ে।

হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মোহাম্মদ নাসিমকে দেখে ভূত
দেখার মতো মনে হচ্ছিল
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের
চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের। অ্যাপ্রোন
পরে নিজেদের টেবিলে আর
ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য পাল্লা দিয়ে
দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন চিকিৎসকরা।
শনিবার(২৭ জুন’২০১৫) দুপুরে শাহবাগে
একটি অনুষ্ঠান শেষে তাৎক্ষণিক
সিদ্ধান্তে শেরে বাংলা নগরের
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে
পরিদর্শনে যান মন্ত্রী।
পরিদর্শনে মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত
একটি সূত্র জানায়, আকস্মিক
পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে
হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও
কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বেশ
কিছু অবহেলার চিত্র ধরা পড়ে।
নাসিম পৌঁছতেই শুরু হয়ে যায়
চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের
দৌড়াদৌড়ি। তাদের কেউ
মোবাইলে, কেউ দৌঁড় দিয়ে
হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে মন্ত্রীর
আগমন ও সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিতে
থাকেন।
তখন শুরু হয় আরেক সার্কাস। নিজ নিজ
জায়গায় পৌঁছার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য
করা যায়। সাধারণ পোশাকে থাকা
চিকিৎসকরা নিজ নিজ রুম থেকে
অ্যাপ্রোন নিয়ে এসে মন্ত্রীর
সামনেই পরতে থাকেন।
মন্ত্রী প্রথমে টিকেট কাউন্টার
পরিদর্শন করেন। তারপর তিনি
বহির্বিভাগের চর্ম ও যৌন এবং
মেডিসিন বিভাগ পরিদর্শন করেন।
সেখানে ডাক্তারের অনুস্থিতির
কারণ জানতে চাইলে একজন নার্স
বলেন, এ দুই জন চিকিৎসক ক্লাস রুমে
শিক্ষা প্রদান করছেন।
এই দু’ বিভাগের সরু জায়গায়
চিকিৎসকদের জন্য অপেক্ষমান
মানুষের ভিড়। বসা তো দূরের কথা,
দাঁড়িয়ে থাকার জায়গাটুকুও নেই।
চিকিৎসকদের দরকার সামনে
সিরিয়াল খাতা নিয়ে বসে আছেন
একজন করে অ্যাটেন্ডেন্ট। অপেক্ষমান
রোগী ও তাদের অভিভাবকরা
অভিযোগ করেন, সিরিয়াল মেনে চলা
হয় না।
অ্যাটেন্ডেন্টদের ইচ্ছেটাই
সিরিয়াল। গোপনে এ্যাটেডেন্টদের
খুশি করলে পেছনের সিরিয়ালও
সামনে চলে আসে। চিকিৎসকদের
অনেকেই বাইরের ডায়াগনস্টিক
সেন্টার ও ক্লিনিকে ল্যাব পরীক্ষা
করানোর জন্য পাঠিয়ে দেন বলে
অভিযোগ করেন।
আর এমন সব ওষুধের তালিকা দিয়ে
দেন, যেগুলো বাইরের ফার্মেসি
থেকে কিনতে হয় বলে অভিযোগ
করেন বহির্বিভাগে আসা রোগী ও
তাদের অভিভাবকরা।
এভাবে দল বেঁধে পরিদর্শনে এলে
হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি
জানা যাবে না বলেও রোগীদের
কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একের
পর এক বিভাগ, ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে
থাকেন মন্ত্রী।
এবার মন্ত্রীর পেছনে সৃষ্টি হয়
চিকিৎসকদের সমাগম। দায়িত্ব পালন
রেখে পরিদর্শন দলের সঙ্গে একাকার
হয়ে যান তাঁরা। অর্থোপেডিক
সার্জারি এবং ওরাল অ্যান্ড
ম্যাক্সিলোফেশিয়া ও সার্জারি
ওয়ার্ড-২ এ যান মন্ত্রী। এখানে ঘটে
হাস্যকর ঘটনা।
ওই ওযার্ডে সোজা পথে প্রবেশ করার
দরজা ছিল। কিন্তু হাসপাতালের
লোকজন বেশ কিছু পথ ঘুরিয়ে
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ওয়ার্ডে নিয়ে
যায়।
সূত্র জানায়, ততক্ষণে সোহরাওয়ার্দী
হাসপাতালের পরিচালক একেএম
মুজিবুর রহমান অপ্রস্তুত অবস্থায়
তড়িঘড়ি করে ছুটে এসে
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
কর্মস্থলে হাজির হন কর্মরত চিকিৎসক
ও নার্সরা। এর আগে নার্সদের জন্য
নির্ধারিত জায়গাটাও ছিল ফাঁকা।
কিছুক্ষণ পরই অ্যাপ্রোন পড়তে পড়তে
ছুটে আসেন কয়েকজন চিকিৎসক। একই
কাজ করেন নার্সরাও। পরিদর্শনকালে
বারান্দায় দাঁড়ানো আব্দুল শহীদ (৬০)
নামক একজন বৃদ্ধ রোগীর কাছে তার
খোঁজ-খবর নেন মন্ত্রী।
অপারেশন করা এ রোগী
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে এবং
সরাসরি কথা বলতে পেরে আনন্দে
আত্মহারা হয়ে যান এবং চিকিৎসকরা
ভালভাবে সেবা দিচ্ছেন বলে
মন্ত্রিকে অবহিত করেন।
এছাড়া মন্ত্রী অর্থোপেডিকের ২
নম্বর ওয়ার্ডে প্রবেশ করে কয়েক জন
রোগীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের
চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
দায়িত্বরত ডাক্তারকে কোন রোগীর
কি হয়েছে তা জানতে চাইলে,
চিকিৎসকরা রোগীর সর্বশেষ অবস্থা
তুলে ধরেন।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিটি স্ক্যান ও
এমআরআই রুমে প্রবেশ করেন এবং
দায়িত্বরতদের কাছ থেকে এর
সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।
কিছু ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন থাকার কারন
হিসেবে অভিভাবকদের কাছ থেকে
জানা যায়, মন্ত্রী আগমনের খবর
পেয়ে রোগীর লোকদের বাইরে বের
করে দেয়ার পাশাপাশি প্রতিটি
ওয়ার্ড তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার
করা হয়েছে। তবে টয়লেটেগুলো
পরিষ্কার করার সময় পায়নি
কর্মচারীরা।
সরেজমিন ঘুরে মন্ত্রী দেখতে পান,
টয়লেটগুলো নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর।
ওয়ার্ডগুলোর দেয়ালের রং খসে পড়ে
কুৎসিত রূপ দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরিদর্শন শেষে এগুলো দ্রুত
সংস্কারের নির্দেশ দেন।
মন্ত্রী এসময় বলেন, হাসপাতালের
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আরো বাড়াতে
হবে। হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা
খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। কর্মস্থলে
চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের
উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে
হবে। দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও
অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
যদি কোন রোগীর সেবাদানের
ক্ষেত্রে কোন ধরনের অবহেলা করা
হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়
স্বজনদের ভিড় না করার পরামর্শ
দিয়ে বলেন, হাসপাতালে যাতে
রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় করে
চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটাতে না
পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
কিভাবে নেয়া হবে তা ভেবে
দেখা হচ্ছে।
রোগীদের কাছ থেকে টয়লেট
অপরিচ্ছন্ন ও নোংরার অভিযোগ
পেয়ে তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত
আউট সোর্সিংয়ের কর্মকর্তাদের
সতর্ক করে দেন। ভবিষ্যতে যাতে
টয়লেটগুলো নোংরা না থাকে সেজন্য
নির্দেশনা প্রদান করেন।
একই সঙ্গে হাসপাতালের সেবার মান
আরো বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি
নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

0 comments:

Post a Comment