Thursday, May 7, 2015

বিশ্বভারতীর আদলে তৈরি হচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

ভালবেসে সখি নিভৃতে
যতনে আমার নামটি লেখ, তোমার হৃদয়
মন্দিরে- কবিগুরুর এই বিখ্যাত গানটি
রচিত হয়েছিল ১৮৯৬ সালে
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের
কাছাড়াবাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার
সময়।
রবীন্দ্র গবেষকরা মনে করেন,
কবিগুরুর গানের এ ‘সখি’ কোনো মানবী
নয়, এ সখি হচ্ছে তার ভালবাসার জায়গা
শাহজাদপুর।
শাহজাদপুর সম্পর্কে ১৫০ নম্বর
চিঠিতে কবি লিখেছিলেন, ‘আমি এর
মোহ থেকে কিছুতেই আপনাকে
ছাড়াতে পারি নে। এই আলো, এই বাতাস,
এই স্তব্ধতা আমার রোমকুপের মধ্যে
প্রবেশ করে আমার রক্তের সঙ্গে
মিশে গেছে। এ আমার প্রতিদিনকার
নতুন নেশা, এর ব্যাকুলতা আমি
নিঃশেষ করে বলে উঠতে পারি নে।
ছিন্নপত্রাবলীর ৩৮টি চিঠির মধ্যেই
শাহজাদপুরকে তিনি কতটা ভালবাসতেন
তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিশ্বকবির সেই
ভালবাসার শাহজাদপুরে স্থাপিত
হচ্ছে দেশের ৩৫তম পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের
শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর আদলে
এটি প্রতিষ্ঠিত হবে।
২৫ বৈশাখ (শুক্রবার, ০৮ মে)
শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি
বাড়িতে কবির ১৫৪তম জন্মবার্ষিকীর
অনুষ্ঠানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপনের খবরে শাহজাদপুর সহ
সিরাজগঞ্জবাসীর মধ্যে উৎসাহ ও
উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন সুষ্ঠু করতে
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ
প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন এখন
ব্যস্ত সময় পার করছেন। শাহজাদপুরের
অধিকাংশ অফিসের পুরানো ভবন
গুলোকে চকচকে করা হচ্ছে। পুরো
শাহজাদপুরকে ঝেড়ে পরিষ্কার করা
হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর রবীন্দ্র কাছারী
বাড়ি পরিদর্শনের কথা রয়েছে তাই
রবীন্দ্র কাছারী বাড়িকে ঝকঝকে
তকতকে করা হয়েছে। সব মিলিয়ে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
শাহজাদপুরে আগমন উপলক্ষে এখন সাজ
সাজ রব।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক নাছিম
উদ্দিন মালিথা বাংলানিউজকে বলেন,
দীর্ঘদিন পর হলেও রবীন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি বাঙালি
জাতি হিসেবে আমাদের কিছুটা হলেও
দায়মুক্তি ঘটবে। ১৮৯০ সালে তিনি
শাহজাদপুরের জমিদারি দেখাশোনা
করার জন্য আসেন। কিন্তু তার
কর্মকান্ড জমিদারির মধ্যে সীমাবদ্ধ
থাকেনি। তিনি শাহজাদপুরের প্রকৃতি
ও মানুষের প্রেমে পড়েছিলেন। এখানে
এসে তার কবিস্বত্বা নতুন মাত্রা
পেয়েছে। এখানে এসেই তিনি
গণমানুষের কথা বলেছেন।
১৮৯০-৯৬ মাত্র ৭ বছর শাহজাদপুরে
অবস্থান করে জনপ্রিয় কবিতা
পুরস্কার, নীল পাখি, বৈষ্ণব কবিতা,
ভরা ভাদরে, দিঘাই, ইছামতি,
আশীষগ্রহণ, ছোটগল্প ছুটি, সমাপ্তি,
ক্ষুধিত পাষান, অতিথি, পোস্ট
মাস্টার ও বিসর্জন নাটক লিখেছেন।
এছাড়াও অসংখ্য কবিতা, গানও তিনি
শাহজাদপুরের মাটিতেই লিখেছেন।
এখান থেকেই তিনি লোকসাহিত্য
চর্চায় ব্রতী হয়েছেন। ১৮৯০-৯৬ মাত্র ৭
বছর শাহজাদপুরে অবস্থান করে তিনি
পুরস্কার, বৈষ্ণব কবিতা, ভরা ভাদরে,
ইছামতি, গল্প ছুটি, সমাপ্তি, পোস্ট
মাস্টার, নাটক বিসর্জন, এখান থেকেই
তিনি লোকসাহিত্য চর্চায় ব্রতী
হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন
বাংলানিউজকে জানান, ভারতের
শান্তি নিকেতন ও বিশ্বভারতীর
আদলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠিত হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে একটি
বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষাঙ্গন হলেও
এখানে পাশাপাশি বিজ্ঞান,
প্রযুক্তি, কৃষি ও বাণিজ্য অনুষদের
বিভিন্ন বিষয়ও পড়ালেখার সুযোগ
পাবে শিক্ষার্থীরা। মূল ক্যাম্পাস
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ছাড়াও
কবির স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার
শিলাইদহ ও নওগাঁর পতিসরে এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদ কিংবা
শাখা ক্যাম্পাস স্থাপিত হওয়ার কথা
রয়েছে। আমরা আশা করছি এটি একটি
আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়
হবে।
সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের
সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন
বাংলানিউজকে বলেন, রবীন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে
শাহজাদপুর তথা সিরাজগঞ্জবাসী
দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে।
এরই ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এক
জনসভায় শাহজাদপুরে রবীন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি
শাহজাদপুরে সরেজমিনে গিয়ে
ইতোমধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসের
জন্য সম্ভাব্য স্থান দেখে যান। ২৫
বৈশাখ কবির ১৫৪তম জন্মবার্ষিকীর
অনুষ্ঠানে এটির ভিত্তিফলক
উন্মোচনের ঘোষণা দেন
প্রধানমন্ত্রী।
স্বপন আরও বলেন, পোতাজিয়া
ইউনিয়নের রাউতারা মৌজায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব ১৪০০
একর জমি ছিল। যা এখন খাস জমিতে
পরিণত হয়ে গো-চারন ভূমি হিসেবে
ব্যবহৃত হচ্ছে। এখান থেকে ২০০ একর
জমি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য
বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

0 comments:

Post a Comment