Thursday, July 27, 2017

সিরাজগঞ্জের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই প্রচারণায়

অনুসন্ধান রিপোর্টঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনী হাওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কৌশলে তাদের প্রচারণা শুরু করেছেন। সভা-সমাবেশ, শুভেচ্ছা বিনিময়, সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন তারা।

ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব প্রার্থীর ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকার গুররুত্বপূর্ণ স্থানে, সড়কের মোড়ে, বিদ্যুতের খুঁটিতে ডিজিটাল শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাদের প্রচারণা থেমে নেই।

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর-সদর/আংশিক) আসন
আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এ আসনে প্রতিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করে। জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এ আসনের সংসদ সদস্য। এখানে তার বিপরীতে মনোনয়ন দৌড়ে তেমন কেউ নেই বললেই চলে।

সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পোস্টার-ফেস্টুন লাগিয়ে প্রার্থিতা ঘোষণা দিচ্ছেন। এদের মধ্যে ১৮ দলীয় ঐক্যজোট থেকে কাজীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুস সালাম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা, সাবেক ছাত্রনেতা রহমতুল্লাহ আইয়ুব, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাপা ও বিএনপি নেতা তুষার তালুকদার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ) আসন
এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় সিরাজগঞ্জ জেলার রাজনীতি। সিরাজগঞ্জ সদরের ছয়টি ও কামারখন্দ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন মিলে সিরাজগঞ্জ-২ আসন গঠিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ে জামাই অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত মুন্না।

সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ সদর আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন হাবিবে মিল্লাত।

এ আসনে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসন বিএনপি অধ্যুষিত হওয়ায় এ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিকল্প নেই বলা চলে।

তবে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ ও সাবেক এমপি মির্জা মোরাদুজ্জামানের ছেলে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ছাত্রনেতা মির্জা মোস্তফা জামান এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। কোনো কারণে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তার সহধর্মিনী জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ অথবা ছাত্রনেতা মির্জা মোস্তফা জামানের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র টিআর এম নুর-ই আলম হেলাল স্বতন্ত্র এবং জাতীয় পার্টি থেকে আমিনুল ইসলাম ঝন্টু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ-সলঙ্গা) আসন
মৎস্য ও শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত রায়গঞ্জ-তাড়াশ উপজেলা ও সলঙ্গা থানা নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট, সাবেক সংসদ সদস্য ইসহাক তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার, সিরাজগঞ্জ-দিনাজপুরের ট্রাস্টি স্বপন কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান দিলু, তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হক ও আবদুল হাদী আলমাজি জিন্নাহ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল হালিম খান দুলাল।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি অস্ট্রেলিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রনেতা মো. রাকিবুল আলম মিঞা অপু, সাবেক এমপি আবদুল মান্নান তালুকদার, রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হক ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম শিশিরের নাম শোনা যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মহাজোট প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফি বিএনপির এম আকবর আলী ও জামায়াতের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম খানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনেও জোট-মহাজোটে রয়েছে কোন্দল।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম। তানভীর নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার সমস্যা-সম্ভাবনা ও উন্নয়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তানভীর ইমাম ছাড়াও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য, পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের মহাপরিচালক প্রয়াত আবদুল লতিফ মির্জার মেয়ে সেলিনা মির্জা মুক্তি।

এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী কামাল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য আবদুল ওয়াহাব।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন
এ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোট প্রায় সমান-সমান। ’৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি এবং ৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদরা নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি থেকে কোনো জাতীয় বা প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ অংশ নেননি। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে বিচারপতি মোজাম্মেল হক বেলকুচি-কামারখন্দ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তিনি দলকে সংগঠিত করতে পারেননি।

দশম সংসদ নির্বাচনে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মণ্ডল। এবার আবদুল মজিদ মণ্ডল মনোনয়ন না চাইলেও তার ছেলে মণ্ডল গ্রুপের পরিচালক মমিন মণ্ডল মনোয়নন চাইবেন।

এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস, ঢাকার বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মীর মোশারফ হোসেন।

বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শিল্পপতি গোলাম মওলা খান বাবলু, চৌহালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন ও বিএনপি নেতা রাকিবুল করিম খান পাপ্পু মনোনয়ন চাইবেন।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর)
সিরাজগঞ্জ-৬ শাহজাদপুর আসনটি তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ হিসেবে পরিচিত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহজাদপুরের সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী চয়ন ইসলাম বিএনপি প্রার্থী কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিশকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামকে বাদ দিয়ে এ আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন দলীয় মনেনায়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন ও সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম ব্যাপকভাবে গণসংযোগ ও নেতাকর্মীদের কাছে টানার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও এআসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ লাবলু।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিশ, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ডা. এমএ মতিনের ছেলে তরুন চিকিৎসক এমএ মুহিত।

0 comments:

Post a Comment