সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন

সিরাজগঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা অনলাইন নিউজ সাইট

বঙ্গবন্ধু বহুমুখি সেতু

যমুনা সেতু তথা যমুনা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু। ১৯৯৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ইহা যমুনা নাদীর পূর্ব তীরের ভূয়াপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করে। এইটি বিশ্বে ১১তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু।

ইলিয়ট ব্রিজ

ইলিয়ট ব্রিজ সিরাজগঞ্জ শহরের কাটা খালের উপরে লোহা ও সিমেন্টের সমন্বয়ে তৈরী। সিরাজগঞ্জ শহরকে দেখার জন্য কাঁটাখালের উপরে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু করে ইংরেজ এসডিও মিঃ বিটসন বেল আই, সি, এস, সাহেব ১৮৯৫ সনে ৪৫,০০০ টাকা খরচ করে বাংলার তৎকালিন ছোট লাট স্যার আল ফ্রেড ইলিয়ট সাহেবের নামানুসারে এই ব্রিজ তৈরী করেছিলেন। নামানুসারে এই ব্রিজ তৈরী করেছিলেন।

Tuesday, April 26, 2016

অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিরাজগঞ্জ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন, জঙ্গি দমন করেছেন, আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি ইউনিয়নে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এবং উন্নয়নের গতি সৃষ্টি হয়েছে। যারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা মানুষের কল্যাণ চায় না, ধ্বংস চায়। বাংলার মাটিতে তাদের স্থান হবে না। পরে তিনি সিরাজগঞ্জের পিপুলবাড়িয়া থেকে সোনামুখী পর্যন্ত শহীদ এম মনসুর আলী সড়কে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৭টি সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এ সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সিভিল সার্জন ডা. শহীদ মো. সাদেকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Monday, April 25, 2016

জ্বালানি তেলের দাম কমলো

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার দুই বছর পর গতকাল রবিবার দেশে তেলের দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে। সরকারের এ নির্বাহী আদেশে মধ্যরাত থেকেই তেলের নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে। পরিপত্র অনুসারে, লিটারপ্রতি অকটেন ও পেট্রলে ১০ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেলে তিন টাকা কমানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে তিন ধাপে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পেট্রল ও অকটেন লিটারপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং ডিজেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানো হবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে দাম কমানোর পর যদি গণপরিবহনগুলোতে ওই হারে ভাড়া কমে তবেই বাকি দুই ধাপে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই প্রথম দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে। যদিও গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
আট বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। প্রথম দফায় ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর পেট্রল ও অকটেনে লিটারপ্রতি ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে সাত টাকা কমানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর অকটেনে লিটারপ্রতি তিন টাকা ও পেট্রলে চার টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে দুই টাকা কমানো হয়। সে সময় প্রতি লিটার অকটেনের দাম ছিল ৭৭ টাকা, পেট্রলের ৭৪ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল ৪৪ টাকা। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি দাম বৃদ্ধির পর লিটারপ্রতি অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই বছরে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যাওয়ায় ভারত, পাকিস্তানসহ বহু দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। এ বিষয়ে জনদাবি উঠলেও সরকার সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত ৩১ মার্চ বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ফার্নেস তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৮ টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা করা হয়। ফার্নেস তেলের দাম কমায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
অন্যদিকে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম সব থেকে কম কমেছে। লিটারপ্রতি তিন টাকা কমলেও কৃষির সেচকাজে ব্যবহৃত ডিজেল বিক্রি করেই সরকার বেশি লাভ পাবে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ক্রয়ে সব ধরনের কর ও খরচ দিয়ে প্রতি লিটারের দাম পড়ছে ৪৮ টাকা ৮২ পয়সা। দাম কমানোর পর এখন থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন বিক্রি হবে ৬৫ টাকায়। তাতে লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনে লাভ হবে সরকারের ১৬ টাকা ১৮ পয়সা। এ ছাড়া অকটেনের দাম কমে ৮৯ টাকা লিটার হওয়ায় এতে লাভ হবে ১৩ টাকা ৪৬ পয়সা। পেট্রলে লিটারপ্রতি লাভ হবে ১৪ টাকা ৪৯ পয়সা।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে সব থেকে বেশি আমদানি করতে হয় ডিজেল। বছরে ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা মুনাফা পেয়েছে শুধু ডিজেল বিক্রি করে। দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে অকটেন ও পেট্রল আমদানি করা হয় না। দেড় লাখ টন অকটেন ও দুই লাখ টন পেট্রল বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসা কনডেনসেট পরিশোধন করে করা হয়। সব থেকে বেশি আমদানি করা হয় ডিজেল ও ফার্নেস তেল। ফার্নেস তেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়। আর ডিজেলের বড় অংশ ব্যবহার হয় কৃষির সেচকাজে ও পরিবহনে।
নির্বিকার পরিবহন মালিকরা : জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা এলেও পরিবহন মালিকরা রয়েছে নির্বিকার। সরকারি ঘোষণার পর পরিবহনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে তারা মতামত প্রকাশ করেনি কিছুই। তবে যোগাযোগ করা হলে গতকাল রাতে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কত কমাবে সেটি নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে আলাপ করেনি। ভাড়া পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত সরকারি কমিটি কোনো বৈঠকও আহ্বান করেনি। আমাদের কয়েকজন নেতা বিদেশে আছেন। আগামী মাসে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব কী করা যায়।’

তৃণমূল নেতাকর্মীদের কথা শুনতে চান এবং সে কারণে জাতীয় সম্মেলন দুই দিনঃ আলহাজ্ব মোহাম্মাদ নাসিম

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাকর্মীদের কথা শুনতে চান এবং সে কারণে জাতীয় সম্মেলন দুই দিন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অভ্যর্থনা উপ-কমিটির সভায় তিনি একথা বলেন।
অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক নাসিম বলেন, “আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথা শুনতে চান। তাই এবারের সম্মেলন দুই দিন করা হয়েছে।”
সভায় বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “২০১৪ সালের আগে-পরে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে শত শত মানুষ মারা গেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”
নাসিম জানান, সম্মেলনে দেশের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমন্ত্রণ জানানো হবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রগতিশীল রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও।
অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক নাসিমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব ডা. দীপু মণি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।
গত ২৮ মার্চ ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এর আগে গত ২০ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কারণ দেখিয়ে সম্মেলন সাড়ে তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। সম্মেলনের নতুন তারিখ আগামী ১০ ও ১১ জুলাই।
ছয় বছর পর বিএনপি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার পরদিনই আওয়ামী লীগের সম্মেলন পেছানোর কথা জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয় চার বছর আগে ২০১২ সালে ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী গত ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরোলেও কাউন্সিল করতে তিন মাস সময় নেয় দলটি।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সপ্তমবারের মতো দলীয় সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
গত সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে সময় দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

Friday, April 22, 2016

আ. লীগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্রমাগত হতাশা এবং ক্ষোভ

দিন যতই যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নিষ্ক্রিয় ও হতাশ নেতাকর্মীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্রমাগত হতাশা। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তৃণমূলে হতাশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রহিজ উদ্দিন আকন্দ। চেষ্টা তদবির করেও নৌকা প্রতীক পাননি তিনি। দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে ব্যর্থ হলেও চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্নে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রহিজ উদ্দিন আকন্দ। স্রোতের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে মাত্র ১৪৯ ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচনে পরাজিত হন। নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে নির্বাচনে হেরে যান রহিজ উ্দ্দিন আকন্দ। এরপরই হতাশ হয়ে দলের প্রতি রুষ্ট হয়ে জনসমক্ষে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে চির বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন আলোয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের এই নেতা। ভবিষ্যতে আর নির্বাচন না করার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রহিজ উদ্দিন আকন্দ বলেন, যখন থেকে বোঝার বয়স হয়েছে, তখন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এখন আওয়ামী লীগে স্বজনপ্রীতির রাজনীতি চলছে। তাই রাজনীতি থেকে দূরে চলে গেলাম। শুধু একজন রহিজ উদ্দিনই নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে এমন হাজার-হাজার রহিজ উদ্দিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, অসংখ্য নেতাকর্মী, সমর্থকের দল আওয়ামী লীগ। এ দলে সব নেতাকর্মীকে যেমন খুশি করা যাবে না, আবার সবাইকে সন্তুষ্টও করা যাবে না। এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জানি, বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভেতরে হতাশা-ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে বলে জানান জাফরউল্যাহ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগে হতাশ নেতাকর্মী, সমর্থকরা রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে শুরু করেছেন। নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীর সংখ্যা হয়েছে হিসাব ছাড়া। এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পেরে নিষ্ক্রিয় সংখ্যা বেড়ে অনেক। ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) ২১ নম্বর ওয়ার্ড (শাহবাগ) থেকে কমিশনার হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। অনেক চেষ্টা তদবির করে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বাগাতে পারেননি তিনি। সব কিছু চূড়ান্ত হলেও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের চাপে নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে তাকে বসে যেতে হয়েছে। সেই থেকে হতাশ হয়ে পড়েন আসাদ।
সর্বশেষ ছাত্রলীগের ত্যাগী এ নেতা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা সভাপতি হওয়ারও চেষ্টা করেন কিন্তু সেখানেও স্থান হয়নি আসাদের। তারপরে আরও হতাশ হয়ে পড়েন আসাদ।
এ প্রসঙ্গে কথা বললে আসাদ বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই রাজনীতি করেছি। রাজনীতিতে টিকে থাকার অনেক লড়াই করেছি। কিন্তু পারছি না। তিনি বলেন, অনেকগুলো চাকরিরও ইন্টারভিউ দিয়েছি, সেখানেও কোনও সুযোগ পাইনি।
এরও আগে পৌরসভা নির্বাচনগুলোয় প্রার্থী হতে না পেরে হতাশ হয়েছে এর সংখ্যাও অগণিত। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের কমিটি নিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হওয়ার পথে।
রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বতন নেতাদের ওপর রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজনীতির প্রতি হতাশ হয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি। দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এ উপজেলায় ভরাডুবি হয়েছে। কারণ হিসেবে দলের তৃণমূলের অনেক নেতা বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতারও অভিযোগ আনা হয়।
পদত্যাগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনীতি যে প্রক্রিয়ায় চলছে তাতে আমরা রাজনীতি করতে পারব না। তাই পদত্যাগ করেছি। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখানে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতি ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর সহোদরকে করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে বিজয়ী হয়েছে জাতীয় পার্টি, দুটিতে বিএনপি এবং একটিতে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
আগামী ২৩ এপ্রিল ভোট হবে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায়। সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যানরা। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতেই বর্তমান চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগের সমর্থনে গতবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার এর মধ্যে একজন মাত্র দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বাকি সবাই বিদ্রোহী প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক ত্যাগী নেতা রাজনীতির প্রতি হতাশ হয়ে দলবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন।
চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামিকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পাওয়া মো. তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে গেন্দু কাজী বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, ১৯৯৩ সালের একটি হত্যা মামলায় তিনি সাজাভোগ করেছেন। তৃণমূলের ভোটেও এ প্রার্থী ছিলেন দুই নম্বরে। তবু নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তিনি। এই নিয়ে কালকিনি ইপজেলা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে তৃণমূলে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে জেলা-উপজেলায় যারা নেতা হয়েছেন, তাদের সবাইর ভেতরে নিজের লোককে রাজনীতিতে ‘স্ট্যাবলিস্ট’ করার এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। এই কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদপদবি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে রাগে-ক্ষোভে ও হতাশায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন তারা।